যে মানুষ আপনাকে বোঝে না, তার কাছে নিজের কষ্ট ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই ।

জীবনের পথে চলতে গিয়ে আমরা অনেক মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলি। কেউ আসে স্বল্প সময়ের জন্য, কেউ থাকে দীর্ঘদিন, আবার কেউ হয়তো সারা জীবন সঙ্গ দেয়। কিন্তু একটা সত্য অস্বীকার করা যায় না—সব মানুষ আমাদের বোঝে না। কেউ শুধু উপস্থিত থাকে, কিন্তু ভেতরের ঝড়টা দেখে না, অনুভব করে না। আর আমরা অনেক সময় ভুল করে ভাবি, “যদি আমি নিজের কষ্টটা বুঝিয়ে বলি, তাহলে হয়তো সে বুঝবে।” কিন্তু আসলে, যে মানুষ আপনাকে সত্যিকারে বোঝে না, তার কাছে নিজের কষ্ট ব্যাখ্যা করার কোনো প্রয়োজন নেই।

মানুষের বোঝাপড়ার ক্ষমতা তার মন আর হৃদয়ের গভীরতার ওপর নির্ভর করে। কেউ হয়তো অল্প কিছু ইঙ্গিতেই বুঝে যায় আপনি কেমন আছেন, আবার কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুনেও আপনার অবস্থাটা ধরতে পারে না। কারণ বোঝা মানে শুধু শোনা নয়—বোঝা মানে অনুভব করা, নিজের জায়গা থেকে নয়, আপনার জায়গা থেকে ভাবা। আর যে মানুষ তা করতে পারে না, তার কাছে কষ্টের ভাষা যতই সাজিয়ে বলুন, সেটা কেবল গল্প হয়ে থাকবে, অনুভব হয়ে উঠবে না।

আমরা অনেক সময় চাই, কাছের মানুষটা যেন আমাদের কষ্টটুকু বুঝুক। তাই বারবার ব্যাখ্যা দিই, যুক্তি দিই, নিজের ভেতরের ক্ষতটা খুলে দেখাই। কিন্তু ফল কী হয়? সে হয়তো মাথা নাড়ে, কিছু সান্ত্বনার কথা বলে, কিন্তু আপনার কষ্টের গভীরতা তার কাছে অস্পষ্টই থেকে যায়। তখন শুধু হতাশা বাড়ে, মনে হয়—“সে এত কাছের মানুষ, তবু কেন বোঝে না?”

এখানেই আসে বড় একটি শিক্ষা—সব মানুষকে নিজের কষ্ট বোঝাতে হয় না। যে আপনাকে ভালোবাসে, সে না বললেও আপনার চোখের ভাষা পড়বে। আর যে বোঝার ইচ্ছাই রাখে না, তার কাছে হাজার ব্যাখ্যা দিয়েও লাভ নেই। বরং বারবার নিজের কষ্ট ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আপনি নিজেই ক্লান্ত হয়ে পড়বেন, আহত হবেন, আর হয়তো মনে হবে আপনার কষ্টটাই তুচ্ছ।

আরেকটা বিষয় হলো, কিছু মানুষ বোঝে না—কারণ তারা বোঝার চেষ্টা করে না। তাদের কাছে আপনার কষ্ট কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, বরং সেটা হয়তো তাদের কাছে বিরক্তির কারণ। আপনি যতই খোলামেলা হোন, তারা ততই উদাসীন থাকবে। এই উদাসীনতা বোঝা গেলে, চুপ করে থাকা অনেক সময় সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ নিজের ভেতরের গভীর অনুভূতিগুলো এমন মানুষের সামনে উজাড় করে দেওয়া মানে সেগুলো অপচয় করা।

জীবনে আমরা এমন মানুষও পাই, যারা এক কথাতেই আমাদের মনের অবস্থা বুঝে যায়। তারা হয়তো কোনো বড় প্রতিক্রিয়া দেয় না, কিন্তু তাদের উপস্থিতি, নীরবতা, আর আচরণে আমরা আশ্রয় পাই। এই মানুষগুলোর জন্য কষ্ট ব্যাখ্যা করার দরকার হয় না—কারণ তারা না বললেও বোঝে, অনুভব করে। আর এদের কাছেই আমাদের মন খুলে দেওয়া উচিত।

মনে রাখতে হবে, বোঝাপড়া কোনো অনুরোধে আসে না। এটা আসে আন্তরিকতা থেকে। যদি কাউকে বারবার বোঝাতে হয় আপনি কষ্টে আছেন, তাহলে বুঝতে হবে, সে আপনার জন্য সঠিক মানুষ নয়—বন্ধুত্বে হোক, ভালোবাসায় হোক, কিংবা অন্য যে কোনো সম্পর্কে। নিজের কষ্টের মর্যাদা দিতে হবে নিজেকেই, আর সেটা তখনই সম্ভব যখন আমরা শিখব—কাকে বলব, কাকে বলব না।

কষ্টের ব্যাখ্যা না দেওয়ার মানে এই নয় যে মন শক্ত হয়ে গেছে, কিংবা আমরা অনুভূতিহীন হয়ে গেছি। বরং এটা হলো নিজের মানসিক শান্তি রক্ষা করার এক ধাপ। কারণ সব মানুষই আপনার গল্পের জন্য তৈরি নয়, আর সবাই আপনার অনুভূতির সঠিক মূল্য দেবে না। তাই নিজের অনুভূতিগুলো এমন মানুষের জন্য রেখে দিন, যারা সেগুলো সযত্নে রাখবে, অবহেলা করবে না।

শেষ পর্যন্ত, বোঝার মানুষ খুঁজে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু নিজের কষ্টের মর্যাদা রাখা—এটা সম্পূর্ণ আপনার হাতে। যে মানুষ আপনাকে বোঝে না, তার কাছে নিজের কষ্ট ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। কারণ বোঝাপড়া না থাকলে ব্যাখ্যাও কেবল শব্দ হয়ে যায়, অনুভূতি হয়ে ওঠে না।

সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।

---

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP	500 SP	1000 SP	2000 SP	5000 SP

---

|| Join the Discord Server for more Details ||

VOTE @bangla.witness as witness

OR

SET @rme as your proxy