আমার অনেক বড় একটি ইচ্ছে ........

আজ আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় একটি স্বপ্নের কথা। সেই স্বপ্নটি হলো জীবনে অন্তত ৩০টি দেশ ভ্রমণ করা। এটা আমার সেই ধরনের স্বপ্ন যার কথা ভাবলে মনটা জেগে ওঠে, হৃদয়ে একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়। ছোটবেলা থেকেই বিদেশ ঘুরে দেখার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল প্রচণ্ড। যখনই টেলিভিশনে কোনো বিদেশি শহরের ছবি দেখতাম, বা পত্রিকায় বিদেশি লোকেশন দেখতাম, তখনই আমার চোখ আটকে যেত। তখনো বুঝতাম না, কেন এসব জায়গা এত টানে, কিন্তু এখন বুঝি—সেই টানটা ছিল এই স্বপ্নের জন্মবিন্দু।

আমার ধারণা, ভ্রমণ শুধু একটা শখ নয়, এটা মানুষের মনের দরজা খুলে দেয়। নতুন নতুন দেশ দেখা মানে শুধু পাহাড়, সমুদ্র, শহর দেখা নয়—বরং মানুষের চিন্তা, জীবনধারা, সংস্কৃতি, ভাষা, খাদ্য, সামাজিকতা—সবকিছু নিজের অভিজ্ঞতার ভেতর এনে নেওয়া। আমি মনে করি, একজন মানুষ যত বেশি দেশ দেখবে, সে তত বেশি নম্র, সহানুভূতিশীল ও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। কারণ ভিন্নতা যখন আপনি কাছ থেকে অনুভব করেন, তখন আর সেটাকে ভয় বা অবজ্ঞা করার অবকাশ থাকে না।

আমি চাই এমন সব দেশে যেতে, যেখানে ইতিহাস কথা বলে, যেখানে প্রকৃতি নীরবে সৌন্দর্যের গল্প শোনায়, যেখানে মানুষ হাসিমুখে আপনাকে অভ্যর্থনা জানায়। যেমন, মিশরের পিরামিড একদিন ছুঁয়ে দেখতে চাই। গ্রিসের প্রাচীন মন্দিরের ছায়ায় দাঁড়িয়ে ইতিহাস অনুভব করতে চাই। সুইজারল্যান্ডের বরফঢাকা উপত্যকায় হাঁটতে চাই, আবার মালয়েশিয়ার বাজারে দাঁড়িয়ে চাই পথের খাবারের স্বাদ নিতে। আমি চাই জাপানের ট্রেন স্টেশনের গতি, ভিয়েতনামের গ্রামের ধীরতা, তুরস্কের চায়ের দোকানের আলাপ, আর ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপের নির্জনতাকে অনুভব করতে।

এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমি এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি জানি, এমন স্বপ্ন হুট করে বাস্তব হয় না। সময় লাগে, পরিকল্পনা লাগে, অর্থ লাগে, সাহস লাগে। তাই আমি একটু একটু করে এগোচ্ছি। প্রতিমাসে নিজের আয়ের একটি অংশ আলাদা করে রাখি শুধু ভ্রমণের জন্য। ইউটিউব আর ট্রাভেল ব্লগ পড়ে পড়ে নানা দেশের ভিসা প্রসেস, আবহাওয়া, সংস্কৃতি এসব সম্পর্কে জানছি। নিজের ইংরেজির দক্ষতা উন্নত করছি। পাশাপাশি মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখছি—কোনো দেশেই যেন সংস্কৃতির ধাক্কায় আমি ভেঙে না পড়ি, বরং মিশে যেতে পারি।

আমার আশেপাশের অনেকে এই স্বপ্ন শুনে হেসে ফেলে। কেউ কেউ বলে, "বাংলাদেশেই তো ঘোরার শেষ নাই, বিদেশ ঘুরে কী হবে?" আমি তাদের বলি, দেশও ঘুরব, বিদেশও ঘুরব। পৃথিবীটা তো সবার। আমরা কেন শুধু আমাদের চেনা গন্ডির মধ্যেই আটকে থাকব? আমি জানি, অনেকেই জীবনের বাস্তবতা, দায়িত্ব, সময় সংকটের কারণে এমন স্বপ্ন দেখতে সাহস পান না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, স্বপ্ন দেখতে সাহস না করলে বেঁচে থাকার মানেটা কিছুটা কমে যায়। স্বপ্নই তো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, এগিয়ে যেতে শেখায়।

কল্পনায় আমি অনেকবার বিদেশ ঘুরে ফেলেছি। চোখ বন্ধ করলে আমি দেখতে পাই, আমি সুইজারল্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি, পেছনে আল্পসের পাহাড়, সামনে একটা ছোট কফি শপ। আমি কফির কাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছি, আর একজন স্থানীয় বৃদ্ধ এসে আমার সঙ্গে কথা বলছে। সে জিজ্ঞেস করছে আমি কোথা থেকে এসেছি। আমি গর্ব করে বলছি, বাংলাদেশ থেকে। সে বলে, "তোমাদের দেশ খুব সুন্দর, আমি পড়েছি পদ্মা সেতুর কথা।" সেই একটুখানি কথায় আমি গর্বে ভরে যাই।

আবার ভাবি, আমি জাপানের এক মন্দিরের গেটে দাঁড়িয়ে আছি, চারপাশে চেরি ফুল ঝরছে, বাতাসে হালকা ঘ্রাণ। আমি ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছি, কিন্তু তার চেয়েও বেশি ছবি তুলছি চোখে, মনের ভেতরে। আরেক সময় ভাবি, আমি গ্রিসে নীল-সাদা বাড়ির পাশে বসে আছি সূর্যাস্ত দেখতে। ওই মুহূর্তগুলো আমার জীবনের কোনো অর্জনের চেয়েও বেশি দামী হবে।

আমি চাই, এই পৃথিবীর অন্তত ৩০টি দেশের ধুলো আমার পায়ে লাগুক। আমি সেই পথ ধরে হাঁটি যেখানে রবীন্দ্রনাথ হেঁটেছেন, সেই শহর দেখেছি যেখানে আইজ্যাক নিউটনের ঘর, কিংবা সেই মসজিদ দেখি যেটি হাজার বছরের পুরনো। আমি শুধু ভ্রমণ করতে চাই না, আমি ইতিহাস ছুঁতে চাই, সংস্কৃতি গায়ে মেখে নিতে চাই, মানুষের ভাষা বুঝতে চাই, আর নিজের চিন্তা-চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে চাই অজানার দিকে।

এই ইচ্ছেটা আমাকে শুধু অনুপ্রাণিত করে না, বরং কঠিন সময়েও টেনে তোলে। যখন কিছু ভালো না লাগে, হতাশা পেয়ে বসে, তখন আমি এই স্বপ্নটা নিয়ে ভাবি। ভাবি—একদিন যদি পাসপোর্ট হাতে টিকিট কেটে আমি বিদেশ যাত্রা করতে পারি, তখন হয়তো আমি আজকের কষ্টগুলো মনে করব না। তখন আমি বুঝব, হ্যাঁ, এই লড়াইটা আমার স্বপ্নের জন্য ছিল।

আপনারাও যদি ভ্রমণের স্বপ্ন দেখে থাকেন, তাহলে দয়া করে সেটিকে দমিয়ে রাখবেন না। হয়তো আজই সম্ভব নয়, কিন্তু শুরু করলেই সম্ভবের পথে এগিয়ে যাওয়া শুরু হবে। কিছু টাকা জমা রাখুন, নতুন ভাষা শেখার চেষ্টা করুন, নতুন দেশের গল্প পড়ুন—এইভাবেই একদিন আপনি পৌঁছে যাবেন সেই দূরের শহরে, যেটা একসময় শুধু কল্পনায় ছিল।

আজকের লেখাটা আমার স্বপ্নের পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়া। একদিন আমি ফিরে এসে লিখব, “আমি পেরেছি।” আর তখন আমি আপনাদের সবাইকে বলব—তোমরাও পারবে।