যে মানুষটা চুপ করে যায়, সে কিন্তু একদিন আর কিছু বলেও না ।
আজ -২০ য় আষাঢ় | ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বর্ষাকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
প্রথম প্রথম আমরা সবাই কষ্ট পেলে কিছু না কিছু বলি। রাগ করি, অভিযোগ করি, মনে কষ্ট জমে থাকলে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করি। কারণ তখন আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের কথাগুলো কেউ শুনবে, বুঝবে, গুরুত্ব দেবে। যাকে ভালোবাসি, তার কাছে কথা বললেই বুঝি সম্পর্কটা ঠিক হয়ে যাবে। আমরা ভাবি, একটু বুঝিয়ে বললেই সে বুঝবে, আমরা তাকে কতটা গুরুত্ব দেই। তাই প্রতিটা কষ্ট, প্রতিটা খোঁচা কথা, প্রতিটা উপেক্ষা— সব কিছু নিয়েই আমরা কথা বলতে চাই।
কিন্তু আস্তে আস্তে যখন বুঝি যে আমাদের সেই কথাগুলো শুনছে না কেউ, যখন অভিযোগগুলোকে বলা হয় অতিরিক্ত আবেগ, ছোটখাটো বিষয়, অথবা নাটক— তখন মানুষ ধীরে ধীরে চুপ হয়ে যেতে শেখে।
চুপ থাকা আসলে সহজ কাজ না। চুপ থাকতে গেলে অনেক কষ্ট চেপে রাখতে হয়, অনেক না-বলা কথা গিলে ফেলতে হয়, অনেক অপমান না দেখে দেখার ভান করতে হয়। কিন্তু যখন একটা মানুষ বারবার বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত হয়ে যায়, যখন একের পর এক অপমানের বা অবহেলার ব্যাখ্যা দিতে দিতে তার নিজের মূল্যবোধ হারিয়ে যেতে থাকে, তখন সে চুপ হয়ে যায়। আর এই চুপ হয়ে যাওয়া হচ্ছে সম্পর্কের সবচেয়ে নীরব মৃত্যু।
একটা সময় ছিল, যখন তোমার একটুখানি দেরিতে রিপ্লাই দেওয়াও তাকে কষ্ট দিত। তুমি কথা না বললে মন খারাপ করত, ফোনে না থাকলে বারবার খোঁজ নিত। কিন্তু আজ সে কিছু বলে না। তুমি এখন আর কতটা ব্যস্ত, কার সঙ্গে কথা বলছো, ঠিকঠাক খেয়েছো কিনা— এসব কিছুই যেন আর তার আগ্রহের তালিকায় নেই। না, সে আর তোমাকে ভালোবাসে না এমন নয়। সে কেবল ক্লান্ত। অনেক বেশি ক্লান্ত।
চিন্তা করে দেখো, সে কতটা ভেবেছিল তোমাকে নিয়ে। কেমন স্বপ্ন দেখেছিল, কেমন করে তোমার প্রতিটা ছোট বিষয়কে যত্নে রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তুমি যখন সেটার মূল্য দাওনি, তাকে বোঝোনি, তার কষ্টকে কষ্ট বলে স্বীকার করোনি— তখন সে ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছে।
এখন সে চুপ থাকে। কারণ সে জানে, তার অভিযোগে কোনো লাভ নেই। তার বলা কোনো কথায় তুমি বদলাবে না। তাই এখন আর কোনো দাবি নেই, প্রশ্ন নেই, এমনকি অভিমানও নেই। কিন্তু এই চুপ থাকাটা তোমার ভাবনার কারণ হওয়া উচিত ছিল। কারণ যে মানুষটা আর কোনো অভিযোগ করে না, সে আসলে আর কিছু আশা করেও না।
আমরা অনেক সময় ভুলে যাই, সম্পর্ক রাগারাগির ভেতরেও বেঁচে থাকে। সম্পর্ক তখনই বেঁচে থাকে, যখন একজন কষ্ট পেলে আরেকজন সেটা বুঝে, সামলে নেয়, বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু যখন একজন কষ্ট পেয়ে কিছু বলে না, আর অন্যজন তা জানতেই চায় না— তখন সেই সম্পর্ক কেবল সময়ের অপেক্ষা করে, শেষ হয়ে যাওয়ার।
অনেক সময় সম্পর্ক ভাঙে না কোনো বড় ঝগড়ায়, কোনো বিশ্বাসঘাতকতায়, বরং ভাঙে একটানা ছোট ছোট অবহেলায়, ভুল বোঝাবুঝিতে, গুরুত্ব না দেওয়ায়। প্রথম প্রথম এসব সামলে নেওয়া যায়, মানুষ আশা রাখে, হয়ত ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যতই সময় যায়, এই অবহেলা জমতে জমতে একদিন আর জোড়া লাগার জায়গা থাকে না।
তাই যদি আজও কেউ তোমাকে নিয়ে কষ্ট পায়, কথা বলে, অভিযোগ করে, রাগ করে— সেটাকে গুরুত্ব দাও। কারণ সে এখনো তোমার মধ্যে কিছু দেখে, এখনো আশা রাখে, এখনো ভালোবাসে। কিন্তু যখন সে একদম চুপ হয়ে যাবে, তখন আর কিছু বলবে না, কিছু চাইবেও না। তখন সে তার মন থেকে তোমাকে ধীরে ধীরে সরিয়ে নেবে।
এবং এই চলে যাওয়া হয় খুব নীরবে। কোনো শব্দ হয় না, কোনো বিদায় হয় না। একদিন তুমি খেয়াল করবে, সে আর আগের মতো নেই। কথায় আগ্রহ নেই, দেখা করার তাড়া নেই, তোমার জীবনে কী ঘটছে সেটা জানার কৌতূহল নেই।
তখনই বোঝো, সে আসলে অনেক আগেই চলে গেছে। শুধু তুমি বুঝতে পারোনি।
এখনো যদি সে তোমার পাশে থাকে, তবে তার চুপ থাকা কণ্ঠহীন এক ডাক। সেই ডাক শুনে যদি তুমি এখনো কিছু করার চেষ্টা না করো, তাহলে একদিন আর কিছুই করার থাকবে না। কারণ কেউ একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে কাউকে ছাড়াই বাঁচতে, তখন সে আর কখনোই ফিরে আসে না।
তাই ভালোবাসার মানুষটিকে যত্নে রাখো। তার অভিযোগগুলোকে বোঝার চেষ্টা করো। তার অভিমানগুলোকে উপেক্ষা করো না। কারণ সেই মানুষটা চুপ করে গেলে, সম্পর্কটা হয়ত তখনও থাকবে, কিন্তু ভালোবাসাটা আর থাকবে না।