জীবনের অনিশ্চয়তা ও কাশ্মীরের জঙ্গিহানা: এক করুণ বাস্তবতা

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

জীবনের অনিশ্চয়তা ও কাশ্মীরের জঙ্গিহানা: এক করুণ বাস্তবতা

💮💮💮💮💮💮💮💮💮


escalator-769790_1280.jpg
সোর্স

জীবন কখনোই সুনিশ্চিত নয়। প্রতিদিনের সকালে আমরা জেগে উঠি আগামী দিনের আশায়, ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়ে। কিন্তু অনেক সময়েই সেই স্বপ্নগুলো ধুলিসাৎ হয়ে যায় এক নিমেষে, যেন সময় নিজের খেয়ালে সবকিছু ওলটপালট করে দেয়। সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হানায় আমরা এরই সাক্ষী হলাম, যেখানে ২৬ জন নিরীহ পর্যটক প্রাণ হারালেন সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায়।

কাশ্মীর। যার নাম শুনলেই মনে পড়ে তুষারে ঢাকা পাহাড়, সবুজ উপত্যকা আর শান্ত হ্রদের ছবি। সেই ভূখণ্ড যেন আজও বারবার রক্তাক্ত হচ্ছে জঙ্গিবাদের ছোবলে। যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তারা কেউ সন্তানসহ ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন, কেউ হানিমুনে, কেউ হয়তো অবসরজীবনে একটু প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে। কিন্তু জঙ্গিদের বর্বর আক্রমণ সবকিছু শেষ করে দিল। সেই বাস, সেই চিৎকার, রক্তে রাঙা রাস্তা। সবই এখন এক বিভীষিকাময় স্মৃতি।

এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনের কোনো স্থিতি নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা যতই কঠোর হোক না কেন, কখন কোন দিক থেকে বিপদ আসবে, তা আমরা কেউই জানি না। আজ যদি কাশ্মীরের মতো পর্যটনস্থল, যেখানে চব্বিশ ঘণ্টা নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি থাকে, সেখানেই এত বড় হামলা হয়, তাহলে বাকি জায়গায় সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ। এই প্রশ্ন থেকেই যায়।

এখানে প্রশ্ন ওঠে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। কিভাবে গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরেও এমন হামলা রোখা গেল না? কীভাবে নিরাপত্তার বলয় ভেদ করে জঙ্গিরা এমন ভয়াবহ আক্রমণ চালাতে সক্ষম হলো? এটি শুধু কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা নয়, এটি গোটা ব্যবস্থার দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি। সময় এসেছে কাশ্মীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে পুনরায় গঠন করার, পর্যটকদের রক্ষার্থে বিশেষ বাহিনী নিয়োগ করার এবং স্থানীয় জনগণকে সন্ত্রাসবিরোধী সচেতনতায় যুক্ত করার।

তবে কেবল নিরাপত্তা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। কাশ্মীরের জটিল রাজনৈতিক ইতিহাস, বৈষম্য, বেকারত্ব ও বিভ্রান্তিকর মতাদর্শকে কাজে লাগিয়ে বহু যুবক জঙ্গিপথে নামছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় দরকার দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা৷ যেখানে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, এবং মানসিক উন্নয়ন থাকবে কেন্দ্রবিন্দুতে।

২৬টি প্রাণ ঝরে গেল। তাদের পরিবারে এখন শোক, হাহাকার, ক্ষোভ ও অসহায়তা। কোনো মা আর দেখতে পাবে না তার ছেলেকে, কোনো শিশুর বাবা চিরতরে হারিয়ে গেল। এই ক্ষতি অপূরণীয়, এই যন্ত্রণা জাতি হিসেবে আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি দাঁড় করায়।

কাশ্মীরের সৌন্দর্য, তার ইতিহাস, তার সম্ভাবনা সবই আজ বিপন্ন। এই বিপন্নতাকে যদি আমরা রুখতে না পারি, তবে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাব একটি অস্থির, অমানবিক ও ভয়াবহ পৃথিবী।

জীবন অনিশ্চিত, তা সত্যি। কিন্তু সেই অনিশ্চয়তাকে যদি জঙ্গিবাদ ও হিংসা অনিবার্য করে তোলে, তাহলে আমাদের লড়াই হবে শুধু বেঁচে থাকার জন্য, শান্তির জন্য, মানবতার জন্য। সময় এসেছে সেই লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়তে হলে আমাদের এখনই সচেতন, সক্রিয় ও সংবেদনশীল হতে হবে। এই মুহূর্তে, এই মৃত্যুগুলো যেন শুধু সংবাদশিরোনাম হয়ে না থাকে৷ তারা হয়ে উঠুক আমাদের বিবেকের আহ্বান।


🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1LsUc8S2zjHiaW6UcX2M5SAfbrPcxiCjQzCc6aZJSjUDgt85bSStrwGCUjZMWCDKxNata4NQ2cZTKGxsY.png

FrDSZio5ZCzUamf35asauSgs1tnNGCc8exBrDii52qi3JpjTyYCF9oFoYfs1EV4VTnFw6faxzt5X7uHiwMAHmLS3ef2Jb2JcxHBkpRBd2y...Qa3Q3c7Biv4c8mKsr8DHNVYqqpVomFSv1wmkMCbhs7oCjb14sjkA3vxAfSRk8QPzNZ5UirrZUzvHCXygHCV49RVVZBeTFCeo47WcQXnjLYGy2RNdJQycJW4cN.jpeg

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

বর্তমান সময়ে জীবনশক্তির বড় অনিশ্চিত। কাশ্মীরে এমন ঘটনা এটা নতুন নয় আগের ঘটেছে তবে কেন বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটছে এবং মানুষ এতটা হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে আজকের যুগে দাঁড়িয়ে তা সত্যি ভাববার বিষয় তবে যে সমস্ত মানুষেরা সন্ত্রাস ছড়িয়ে যাচ্ছে তাদের গোড়া থেকে নির্মূল করে দেওয়াই প্রয়োজন।