ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও পতাকার সম্মান নিয়ে একটু ভেবে দেখুন। একটি বিশ্লেষণ।
ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। একটু ভেবে দেখুন।
🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏
আমরা প্রত্যেকেই কোন না কোন দেশের অধিবাসী। জন্মসূত্রে কোনো দেশের নাগরিক আমরা সকলেই। আসলে জন্ম মানুষকে দেশের সীমানাতেই নিতে হয়। পৃথিবীর রাজনৈতিক মানচিত্রে যেমন একাধিক দেশ বিদ্যমান, আমরাও তেমন জন্মসূত্রে কোন না কোন দেশে জন্মগ্রহণ করি মায়ের কোলে। দেশ বলতে আমরা আসলে কী বুঝি? দেশ আসলে এমন এক ভূমি যেখানে আমরা বেড়ে উঠি এবং এক আবেগমথিত চিত্তে সেই ভূমিকে স্মরণ করি। আসলে দেশজনিত আবেগ আমাদের গড়ে ওঠে জন্মগত। কথায় বলে,
জননী জন্মভূমিশ্চঃ, স্বর্গাদপি গরিয়সী...
এই বাক্য থেকেই পরিষ্কার যে জননী এবং জন্মভূমি আমরা উভয়কে নিয়েই আমাদের জীবন পরিচালনা করি। এই দুই প্রায় সমভাবাপন্ন শব্দ মানুষের জীবনে কিভাবে আনাচে-কানাচে জড়িয়ে আছে তা আমরা একটু ভেবে দেখি কি? আসলে অন্যের আবেগে আঘাত করা আমাদের এক বিকৃত চিন্তার ধারক ও বাহক। এই বিকৃত চেতনাকে ধারণ করতে করতে আমরা মনুষ্যত্বের থেকে অনেক নিচে নেমে গেছি। যে দেশেই আমরা জন্মগ্রহণ করি না কেন, আসলে সেই দেশ আমাদের মা তুল্যই৷ আর অন্যের মাকে অপমান করার এবং নিজের মাকে অপমান করার মধ্যে ফারাক খুঁজে পাওয়ার মত চেতনা এবং বোধ আমাদের মধ্যে আজ আর আছে কি? নিজের মা ভালো থাকুক, এবং অন্যের মায়ের ক্ষতি হোক, এই বোধের জন্ম হয় আসলে কোথা থেকে? শিক্ষার অভাব এবং অর্ধশিক্ষার সংক্ষিপ্ত পরিসরে বাস করতে করতে আমরা কখন যেন অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে গেছি। তাই নিজের ঘরকে ভালো রেখে পাশের ঘরে গিয়ে উপদ্রব করে আসি অনায়াসে। কখনও ভেবে দেখি না আসলে আমি নিজে এই ঘটনাটার সঙ্গে সাবলীল কিনা?
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি ভারতবর্ষের নাগরিক। হতেই পারি। ভারত আমার নিজের দেশ, আমার মাতৃভূমি। কিন্তু এই ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ আমি কি স্বেচ্ছায় করেছি? অর্থাৎ জন্মের আগে উপরওয়ালাকে আমি কি পছন্দমত জন্মের দেশের তালিকা হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলাম? কোনদিনই না। আপনিও নিশ্চয় তা করেননি। ঠিক যেমনভাবে আপনি জন্মের আগে মায়ের কোল পছন্দ করতে পারেন না, ঠিক তেমনভাবেই কোন দেশে জন্মাবেন এবং কোন ধর্মে জন্মাবেন তাও পছন্দ করতে পারেন না। আসলে এগুলি সবই অদৃষ্টের নিয়ম। আপনি এই জন্মে বলে যেতে পারবেন যে পরের জন্মে আপনি ভারতবাসী বা বাংলাদেশী হয়ে জন্মাবেন? তাই যে জিনিস আমাদের হাতে নেই, তাকে নিয়ে অযথা আমাদের কিসের এত উল্লাস? জন্মভূমির উপর মানুষের আবেগ থাকে অবশ্যই। কারণ জন্মগতভাবে আমরা সেই জন্মভূমির মাটিতে বেড়ে উঠি এবং সেই দেশের কথা শুনতে শুনতে আবেগাপ্লুত হই। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আমরা অনায়াসে অন্য দেশের মাটিকে কলুষিত করতে পারি। ভারতবাসী হয়ে যেমন বাংলাদেশের পতাকাকে আমি পুড়িয়ে দিতে পারি না, ঠিক তেমনভাবেই বাংলাদেশেও ভারতের পতাকাকে জ্বালিয়ে দেওয়া যায় না। এ আসলে এক নারকীয় ঘটনার উদাহরণ।
আমরা কখনও ভেবে দেখেছি যে একটি দেশের জন্য তার প্রতিবেশী দেশের কতটা ভূমিকা? প্রতিবেশী মানে কী? পাশে ঘিরে থাকা দেশগুলির সঙ্গে যদি সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে না ওঠে, তবে কিসের ভালো থাকা? আজ বিশ্বায়নের যুগে অন্য দেশের পণ্য আমিও ব্যবহার করব, তা আমার অধিকারভুক্ত নয় কি? একটু ভেবে দেখুন তো। আজ এই যুগে দাঁড়িয়ে আমি ভারতবর্ষে বাস করে যদি বলি বিদেশি দ্রব্য বর্জন করব, তবে তা কেমন মধ্যযুগীয় শোনাবে? দেশের অর্থনীতির সাথে শুধুমাত্র দেশীয় দ্রব্য জুড়ে আছে এই ভুল ধারণা আপনাদের দিল কে? আসলে আমদানি রপ্তানিও একটি দেশের বহির্বাণিজ্যে যে বিশেষ ভূমিকা নেয় তা সকলের জেনে রাখা উচিত। তাই আজ এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর যুগে অন্য দেশের পতাকা পোড়ানো অথবা অন্য দেশের দ্রব্য বয়কট করা এসব শুধুই বালখিল্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমরা যখন দেখতে পাই একজন মানুষ অন্য দেশের পতাকাকে অনায়াসে পদদলিত করে, তখন তা আমাদের আবেগে এক নির্মম আঘাত হানে। তাই এই আঘাতকে সহমর্মিতায় পরিণত করে আমরা কেন বিপরীত ভাবনায় নিজেদের উদ্বুদ্ধ করতে পারি না? জীবন আসলে খুবই স্বল্প। সেখানে হানাহানি, মারামারির প্রয়োজনীয়তা আসলে কী, তা আমরা কখনো বৃহৎ পরিসরে ভেবে দেখেছি কি? এক দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে অন্য দেশের পতাকা পুড়িয়ে দেওয়া, অথবা আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার মধ্যে আদৌ কি কোন বীরত্ব আছে? দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা পতাকা জ্বালানো বা পোড়ানোর ওপর নির্ভর করে না। এসব শুধুই বিপরীতধর্মী আবেগের এক জঘন্য বহিঃপ্রকাশ। তাই এই সবকিছুর পিছনে তীব্র প্ররোচনা ছাড়া আর কিছুই নেই। শিক্ষিত মানুষের পক্ষে কোনদিন এমন ধরনের কাজ করা সম্ভবই নয়।
সবশেষে বলি ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সম্পর্ক আমরা কি করে ভুলে যেতে পারি? কিসের ধর্ম? কিসের সীমানা? আমরা কত সহজে ভুলে যেতে পারি ১৯৪৭ সালের আগের ঘটনাক্রম। তাই না? যখন মাস্টারদা সূর্যসেন দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করছেন চট্টগ্রামের মাটি থেকে, আর এদিকে ক্ষুদিরাম বসু আদালতে লড়ছেন কলকাতার আলিপুর বোমা মামলার বিখ্যাত ঐতিহাসিক মকদ্দমায়, তখন কোথায় চট্টগ্রাম আর কোথায় কলকাতা? কত সহজে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এই দুই বাংলা এসেছিল এক ছাদের তলায়। আমরা জানি একসময় শিয়ালদা স্টেশন থেকে পরপর ছেড়ে যেত খুলনা এক্সপ্রেস আর যশোর এক্সপ্রেস। দুই বাংলার যে সীমানা আজ নির্ধারিত, যে কাঁটাতার দিয়ে আজ দুই দেশকে আলাদা করা হয়েছে, তা নিতান্তই রাজনৈতিক নয় কি? আর সেই রাজনৈতিক রং যদি আমরা মানবিক চেতনাতেও জড়িয়ে নিই, তবে তা কখনোই দুই দেশের পক্ষে মঙ্গলদায়ক নয়। কখনও ভেবে দেখেছেন ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক খারাপ হলে পাশ্চাত্যের দেশগুলি কিভাবে তার মুনাফা লুটবে? ওই যে আগেই বললাম, আপনি কোন ধর্মে আর কোন দেশে জন্মাবেন তা আপনি পছন্দ করে দেননি। তাই যা আপনি পছন্দ করেননি তাকে আবেগে রাখুন অবশ্যই, কিন্তু নিজস্বতার পরিচয়ে পরিণত করবেন না। আপনার প্রাপ্তিটুকুই খালি আপনার নিজস্ব। বিশ্বচেতনায় দাঁড়িয়ে কিসের এত সংকীর্ণতা? কিসের দেশ আর কিসের গণ্ডি? তাই নিজের প্রাপ্ত সেই শিক্ষা থেকে অন্তত মানবিক চেতনায় নিজেদের শিক্ষিত করে তুলুন। লড়াই করবার জন্য দুটি দেশের জন্ম হয় না। লর্ড মাউন্টব্যাটেন তথা ইংরেজ সাহেবরা যে কাঁটাতারের বেড়া লাগিয়ে গেছে, তাকে একটি রাজনৈতিক সীমানা হিসেবেই দেখুন। আর পারলে দুই দেশের ফ্ল্যাগের সামনে দাঁড়িয়ে একবার স্যালুট করে বলুন, এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে আমরা এক সম্মিলিত শক্তি। তাই বাইরে থেকে বহিরাগতরা লুটেপুটে খাওয়ার আগেই আমরা যেন গুছিয়ে নিতে পারি নিজেদের স্বার্থটুকু। কোথায় ভারত আর কোথায় বাংলাদেশ? মাঠে যখন গরু চড়ে যায়, ধুধু প্রান্তরে যখন সোনার ফসল মাথা দোলায়, সেই ছবি দেখে আপনি নির্ধারণ করে বলুন তো, ভূমিটি কোন দেশের। পারবেন না। তাই অহেতুক বিবাদে না জড়িয়ে নিজস্বতাকে চিনুন। আর কাঁটাতারের বেড়াটাকে সেই সাহেবদের বানানো বেড়াজাল হিসেবেই রেখে দিন। দয়া করে কোন দেশের পতাকা পোড়াবেন না, আর অন্য দেশের মানুষদের উপর অযথা আক্রমণ করবেন না। এতে আমাদের কোন দেশেরই আন্তর্জাতিক সম্ভ্রম বৃদ্ধি হচ্ছে না। এটুকু আমরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারি ততই মঙ্গল।
জয় হিন্দ। জয় বাংলা। 🇮🇳 🇧🇩
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1863980117908697215?t=vqX0dBPiP-GpBoJlz8EzYQ&s=19
একটি দেশের পতাকা শুধু ওই দেশের ঐতিহ্য নয়,বরং ইতিহাস, ঐতিহ্য,সংস্কৃতি, সম্প্রীতির প্রতীক।বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের যে ঘটনাগুলো ঘটছে তা খুবই দুঃখজনক।বাংলাদেশের জনগণ হিসেবে এরকম আশা আমি কখনোই করিনি।এক অসাধুগোষ্ঠী বাংলাদেশের এই খারাপ সময়কে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক কে নষ্ট করতে চাচ্ছে।কিন্তু আমরা দু'দেশের মানুষ এটা কখনোই হতে দেব না।তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াবো।তবুও আমরা ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে কখনোই নষ্ট করতে দেবো না।
ভারত বাংলাদেশ চিরকালীন বন্ধু ভাই। এটাকে নষ্ট করাবার চেষ্টা করা হচ্ছে। ধর্ম যার যার, কিন্তু ভারত বাংলাদেশ সবার। এই নীতিতে বিশ্বাসী আমরা সকলে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
পুশ প্রোমোশন -
সাধারণ মানুষ সবসময় বলি কা বকরা হয়েছিল। আজও তাই। এই যে ছাত্র-ছাত্রীরা কর্মকাণ্ড গুলো ঘটিয়েছে একদিন আসবে এরাই পস্তাবে। এরা ভাববে এরা কিভাবে রাজনীতির শিকার হয়ে গেছিল। মানুষ হিসেবে কি অনায়াসে যেন মান আর হুঁশ খুইয়ে বসেছে৷ যাইহোক আশা করি তাড়াতাড়ি সুদিন আসবে। আর সবাই ভালো থাকবে। খুব ভালো আলোচনা করেছো। সমৃদ্ধ হওয়ার মত পোস্ট।
একদম ঠিক তাই। আসলে মানুষ রাজনীতি দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। কেউ অন্য কিছু ভাবে না।। একটা সময় পরে সকলেই বোঝে বড় ভুল হয়েছিল। আমার লেখা পড়ে মন্তব্য করলি বলে খুব ভালো লাগলো।
ঠিক বলেছেন দাদা আমরা ইচ্ছে মতো কোন দেশে জন্ম নিতে পারি না।সৃষ্টিকর্তা যে দেশে পাঠিয়েছে সেটাই জন্মভুমি।পতাকা আমাদের মা। মাকে সন্মানীত করতে চাইলে অন্যের মা কেও সন্মান করা উচিত ঠিক সে-রকম নিজের দেশের পতাকার মান রাখতে হলে অন্যদেশের পতাকাকে সন্মান করা মনুষ্যত্বের পরিচয়। আশা করছি পতাকা অবমাননাকর নোংরা কাজ আর কেউ করবে না। নিজের ভুল বুঝতে পারবে।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।
আমার পোস্ট পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করলে বলে খুব ভালো লাগলো। কোন দেশকে অবমাননা করা মানেই আসলে নিজেকেই অসম্মান করা
পতাকা একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতিক যা একটি দেশকে বিশ্বের কাছে সন্মানিত করার জন্য একটি প্রতিক এটি কোনো সাধারণ কাপড়ের টুকরো নয় যে চাইলেই পদদলিত করা যায়!এই ধরণের কাজে যারা নিয়োজিত হয়েছে তারা আর যাইহোক মানুষ বলে মনে করি না।অন্য কে ছোট করে নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখানো এটা কখনোই দেশপ্রেম হতে পারে না।ভগবান এদের সুবুদ্ধি প্রদান করুক এই প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।🙏
একদম ঠিক বলেছ। পতাকা একটি দেশের কাছে সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আর সেই পতাকা সারা পৃথিবীর কাছে সম্মানীয়। সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকলে বলে ধন্যবাদ।