বেলুড় মঠের সন্ধ্যারতি : এক আত্মিক প্রশান্তির সন্ধান

in আমার বাংলা ব্লগlast month

বেলুড় মঠের সন্ধ্যারতি : এক আত্মিক প্রশান্তির সন্ধান

💮💮💮💮💮💮💮💮💮


IMG_20250418_175302_505.jpg


🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏


আজ বিকেলবেলা হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিই, একটু বেলুড় মঠে ঘুরে আসব। কর্মব্যস্ত জীবনের চাপের মাঝে মাঝে এমন জায়গায় চলে যাওয়া একপ্রকার মানসিক বিশ্রাম। দক্ষিণ কলকাতা থেকে একটু দূরে হলেও বেলুড় মঠের দিকে পা বাড়ানো মানেই এক অন্যরকম শান্তির অভিজ্ঞতা। হাওড়ার কোলঘেঁষা এই স্থাপত্য শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বরং রামকৃষ্ণ পরমহংস, মা সারদা ও স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিবাহী এক আধ্যাত্মিক পীঠস্থান।

মঠের মূল প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকতেই যেন এক অন্য জগতে প্রবেশ করলাম। চারপাশে ছিমছাম পরিপাটি রাস্তা, ছায়াঘেরা বৃক্ষরাজি, দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মঠের সৌন্দর্যময় গম্বুজ। একদিকে সুদূর জলরেখার মতো বয়ে চলেছে গঙ্গা, অন্যদিকে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মঠের নীরব সৌম্যতা। কোলাহল নেই, শুধু পাখির ডাক আর মানুষের মৃদু পদচারণার শব্দ। এমন নীরবতা মনে হয় না শহরে আর কোথাও পাওয়া যায়।

IMG_20250418_174628_093.jpg

একটু ঘোরাঘুরি করে যখন মূল মন্দিরের দিকে এগোলাম, তখনই শুনতে পেলাম সন্ধ্যারতির ঘণ্টার শব্দ। একটা অজানা টান অনুভব করলাম, যেন এই শব্দের মধ্যে কোনও অতিপ্রাকৃত আহ্বান লুকিয়ে আছে। মন্দিরের সামনের চাতালে বসে পড়লাম। ধীরে ধীরে লোকজন জমে উঠছে, সকলেই নীরব—কারও চোখ বন্ধ, কারও ঠোঁটে প্রার্থনার কোলাহলহীন শব্দ।

সন্ধ্যারতি শুরু হল। পুরোহিতরা ধূপ-দীপ নিয়ে আরতির সুরে গাওয়া শুরু করলেন, “কণ্ডলিত জ্যোতির্ময় দীপ্তিমান, ত্রিলোকের প্রভু তুমি পরম করুণাময়...”। সেই গানের প্রতিটি শব্দ যেন হৃদয়ে প্রবেশ করল। চারদিকে ধূপের গন্ধ, ঘণ্টার সুর, দীপের আলো আর সুরেলা কণ্ঠের মিলনে যেন পরিবেশটা রূপ নিল এক গভীর ধ্যানের। মনে হল, আমি আর আমি নেই—এই আরতির সুরে ভেসে যাচ্ছি কোথাও দূরে, শান্তির গভীরে।

IMG_20250418_175050_968.jpg

গানের মাঝে চোখ চলে গেল গঙ্গার দিকে। সূর্য তখন অস্ত যায় যায় করছে, আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে গোধূলির কুমারী আলো। নদীর জলে সেই আলো আর দীপের প্রতিচ্ছবি যেন এক শিল্পকর্ম। মন চাইল, এই মুহূর্তটাকে ধরে রাখতে, সময়টা একেবারে থামিয়ে দিতে। সন্ধ্যারতির ওই সুর যেন আমার ভেতরের সমস্ত অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা, ক্লান্তিকে ধুয়ে দিয়ে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দিল।

আরতি শেষ হওয়ার পর আমি গঙ্গার ধারে গিয়ে বসলাম। নদীর ধারে বসে থাকা এক অদ্ভুত অনুভূতি—জীবনের গতি আর প্রকৃতির স্তব্ধতা এখানে একসাথে মিলেমিশে থাকে। বসে বসে ভাবছিলাম—এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলিই হয়তো জীবনের সত্যিকারের অর্থ বহন করে। না আছে ব্যস্ততা, না আছে কোনো প্রাপ্তির প্রতিযোগিতা—শুধু থাকা, নিঃশব্দে নিজেকে ছুঁয়ে দেখা।

IMG_20250418_174025_986.jpg

কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যার অন্ধকার আস্তে আস্তে ঘনিয়ে এলো। ফিরে আসার সময় মঠের দিকে একবার ফিরে তাকালাম। মনে হল, যেন কেউ চুপ করে বলছে—“আবার এসো, যখনই মন ক্লান্ত হবে, আমি আছি...”

আজকের এই সন্ধ্যা আমাকে এক নতুন অনুভব এনে দিল। এই অনুভবকে ভাষায় সম্পূর্ণ প্রকাশ করা যায় না—তবে এটুকু বলতে পারি, যারা জীবনের ছুটোছুটির মাঝে একটু নীরবতা খোঁজেন, একটু হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলার জায়গা চান, তাঁদের জন্য বেলুড় মঠ এক নিঃশব্দ আশ্রম—যেখানে গিয়ে মন আর আত্মা একসাথে প্রশান্ত হয়।


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস
আনএডিটেড
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
বেলুড়, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ

🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1LsUc8S2zjHiaW6UcX2M5SAfbrPcxiCjQzCc6aZJSjUDgt85bSStrwGCUjZMWCDKxNata4NQ2cZTKGxsY.png

FrDSZio5ZCzUamf35asauSgs1tnNGCc8exBrDii52qi3JpjTyYCF9oFoYfs1EV4VTnFw6faxzt5X7uHiwMAHmLS3ef2Jb2JcxHBkpRBd2y...Qa3Q3c7Biv4c8mKsr8DHNVYqqpVomFSv1wmkMCbhs7oCjb14sjkA3vxAfSRk8QPzNZ5UirrZUzvHCXygHCV49RVVZBeTFCeo47WcQXnjLYGy2RNdJQycJW4cN.jpeg

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif