বিদ্যালয় অনুষ্ঠিত হওয়া অনুষ্ঠানের কিছু মুহূর্ত এবং অনুভব।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: শিক্ষাজীবনের এক অবিস্মরণীয় দিন
বিদ্যালয়জীবনের নানা অভিজ্ঞতার মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে ওঠে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও ছাত্রছাত্রীরা যে নানা প্রতিভা ও সৃজনশীলতার অধিকারী, তা এমন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। সম্প্রতি আমাদের বিদ্যালয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, যা এক কথায় ছিল অনবদ্য। অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় বারাসাত শহরের রবীন্দ্রভবনে। এক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, যেখানে এমন আয়োজন আরও বেশি গুরুত্ব ও গাম্ভীর্য লাভ করে।
অনুষ্ঠানের দিন সকাল থেকেই এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও কর্মীরা সকাল সকাল এসে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। অনুষ্ঠানটি শুরু হয় প্রদীপ প্রজ্বালন ও স্বাগত সংগীত দিয়ে। এরপর একে একে শুরু হয় নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। গান, আবৃত্তি, নৃত্য, নাটক এবং কোরাস পরিবেশনা। প্রতিটি বিভাগ ছিল অত্যন্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফসল। ছাত্রছাত্রীরা যে কতখানি যত্ন করে প্রস্তুতি নিয়েছে, তা তাদের মঞ্চে ওঠার মুহূর্তেই বোঝা যাচ্ছিল।
নাচের পরিবেশনায় ছিল রবীন্দ্রনৃত্য এবং আধুনিক সৃজনশীল নৃত্য, যা বর্তমান প্রজন্মের ভাবনা ও প্রকাশের রূপকে তুলে ধরেছে। গানের মধ্যেও ছিল বৈচিত্র্য। একক সংগীত, দ্বৈত গান ও দলীয় গান, যার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা শুদ্ধ সুর ও তাল মেনে গাইতে শিখেছে। নাটকে স্থান পেয়েছিল সামাজিক সচেতনতার বার্তা। একটি নাটকে দেখানো হয়েছিল কিশোর বয়সে মোবাইল আসক্তির পরিণতি, আরেকটি নাটকে তুলে ধরা হয় পরীক্ষার মানসিক চাপ থেকে কিশোরদের মুক্তির উপায়। এগুলো শুধু বিনোদন নয়, শিক্ষণীয়ও ছিল।
আমরা শিক্ষকরা প্রতিটি ক্ষেত্রে যতটা পেরেছি, সহায়তা করেছি। কেউ সংলাপ লিখে দিয়েছি, কেউ নাচের তালে সাহায্য করেছি, কেউ গান বাছাই করে দিয়েছি। সবচেয়ে বড় বিষয়, ছাত্রদের উৎসাহ দিয়ে পাশে থেকেছি, যাতে তারা ভয় না পায়, আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজেদের মেলে ধরতে পারে। এমন অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক আরও আন্তরিক ও সহযোগিতামূলক হয়ে ওঠে।
সবচেয়ে আনন্দের বিষয় ছিল অভিভাবকদের উপস্থিতি। রবীন্দ্রভবনের বিশাল আসনভর্তি দর্শক আসনে তারা বসেছিলেন আগ্রহ নিয়ে। অনুষ্ঠান চলাকালীন তাদের মুখের উজ্জ্বলতা, করতালির ধ্বনি এবং সন্তানদের প্রতি গর্বিত দৃষ্টিই প্রমাণ করছিল, এ আয়োজন কতখানি সার্থক হয়েছে। অনেক অভিভাবক অনুষ্ঠান শেষে এসে আমাদের ধন্যবাদ জানান। তারা বলেন, এমন আয়োজন আরও হোক, তাদের সন্তানরা যেন পড়াশোনার পাশাপাশি এইরকম মঞ্চেও নিজের জায়গা করে নিতে পারে।
এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমাদের সকলের জন্য ছিল এক শিক্ষা। কিভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এক সুন্দর স্মরণীয় দিন গড়ে তোলা যায়। শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নয়, শিক্ষক-অভিভাবক সবার অংশগ্রহণে এটি হয়ে উঠেছিল এক সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা।
এই অনুষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাস পেয়েছে, দলগত চেতনা গড়ে উঠেছে, সাহসী হয়ে উঠেছে। তারা বুঝেছে মঞ্চ মানেই নিজেকে প্রকাশ করার এক বিরল সুযোগ, যেখানে ভুল করলেও শেখা যায়, এবং শেখাই আসল জয়।
ভবিষ্যতেও এমন সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয় হয়ে উঠুক সৃজনশীলতার এক প্রাণবন্ত ক্ষেত্র, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এই অনুষ্ঠানের স্মৃতি শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে দীর্ঘদিন রয়ে যাবে এবং তাদের শৈশব-কৈশোরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দিন হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1924389009230315930?t=CYjdxWPAVZotXuumM-3Tmg&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.