শহুরে জীবনে আমার রোজকার পথ চলার সাতকাহন।
শহরে কাটানো প্রতিদিনের রোজনামচা
রোজ সকালে, যখন শহরের অলিগলিতে প্রথম সূর্যের আলো এসে পড়ে, আমি বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। গঙ্গা পেরিয়ে, এক শহর থেকে আরেক শহরে পা বাড়াই, আর শহরের ভিড়ে নিজের ছায়া খুঁজে পাই। বাইক চালানোর সময়, হালকা বাতাসে চোখে পড়ে সেই সব ছোট ছোট বিবর্ণ রাস্তা, যেগুলো শহরের তাড়াহুড়ির মধ্যে যেন কখনো হারিয়ে যায়। কিন্তু আমি জানি, এই সব ছোট পথগুলোই আমাকে আমার পথে নিয়ে যায়।
গঙ্গা পেরোনোর সময় মনে হয়, সেই চিরকালীন জলরাশি, যে নদী কত মানুষের সাক্ষী, সেই নদীর বুকেই অনেক কিছু মিশে থাকে। কখনো কখনো গঙ্গার ঢেউয়ের মধ্যে আমি দেখতে পাই শহরের কোলাহলের অতলান্ত গভীরতা। মাঝে মাঝে একটা লালচে রোদও গঙ্গার মধ্যে ভেসে ওঠে, যা যেন একান্তভাবে আমার দিনটাকে শুরু করতে চায়।
স্কুলে পৌঁছানোর পর, ছয়টা ক্লাস একে একে সেরে ফেলি। ক্লাসরুমে ছাত্রদের মাঝে চলে যায় এক অদ্ভুত খেলা—শিক্ষা, আলোচনার, প্রশ্নোত্তরের লহরে ভরা। Artificial Intelligence নিয়ে তাদের মাঝে উত্তেজনা থাকে, যেন একটা নতুন পৃথিবী খোলার আশায় তারা ঝুঁকছে। ক্লাসের প্রতিটি মূহুর্তে মনে হয়, শিক্ষক শুধু জানিয়ে দেয় না, বরং ছাত্রদের মনোযোগ, উৎসাহ আর আগ্রহই তাকে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।
বিকেলে, যখন ক্লাস শেষ হয়, তখন আবার একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়। পড়াতে যাওয়ার সময়, বাইকের সিটে বসে একপাশে চিন্তা মিশিয়ে নেওয়া সহজ হয় না। পড়ানোর আগে প্রায়শই মনে হয়, আবার কী নতুন উপায় নিয়ে তাদের সামনে যাবো? কিন্তু শহরের এই ঘন ভিড়ের মধ্যে, এই দিনশেষে কিছু না কিছু নতুন ভাবনা, কবিতার শব্দ কখনো মাথায় উঠে আসে।
অনেক সময় ক্লাসের মাঝখানে, হালকা শ্বাস ফেলে, মনে হয়, যে পৃথিবীটাকে প্রতিদিন দেখি, তার ভেতরই আছেই কিছু কবিতার সন্ধান। হয়তো ক্লাসের মাঝেই কোনো ছাত্রের প্রশ্নে, বা কোনো ছোট্ট কথা দিয়ে, আমি খুঁজে পাই আমার কবিতার জন্য একটি বীজ। শহরের অভ্যন্তরে ঘুরে বেড়ানো মানুষ, তাদের হতাশা, আনন্দ, ক্লান্তি, এই সমস্তই যেন আমার মনের মধ্যে এসে জমে, এক নতুন কবিতা সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।
রোজ রাতে, ক্লাসের শেষে, বাড়ি ফিরে, যখন সময় পাই, আমি বসে পড়ি কবিতা লিখতে। যদিও কখনো বা মনে হয়, এই শহর, এই রোজনামচা নিজেই একটি কবিতা হয়ে উঠেছে। শব্দ আর রেশমের মতো ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিদিনের জীবন। সবকিছু যেন নিজে থেকেই গড়ে ওঠে, প্রতিদিন। প্রতিটি ছোট মুহূর্ত, প্রতিটি পদক্ষেপ যেন একটি দীর্ঘ কবিতার অংশ হয়ে যায়, যা আমার জীবনের মূল রচনা।
এভাবেই শহরের মধ্যে নিজের একটা ছন্দ খুঁজে বের করা যায়। কখনো প্রতিদিনের জীবনে, কখনো বাইকের সীটে, কখনো বা ক্লাসের মধ্যে। এই শহরের প্রতিটি কোণে, এই শহরের বিরামহীন চলাচলে, আমার রোজনামচা হয়ে ওঠে জীবনের আসল কবিতা। সবকিছু এক হয়ে, মিশে যায়। এটা যেন আমার প্রতিদিনের এক অসমাপ্ত গল্প।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে ভাইয়া জীবন সেখানে যেমন। আপনার শহরের জীবনে পোস্ট পড়ে সত্যি অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
https://x.com/KausikChak1234/status/1911960611858104345?t=pTi8M4E1eksf3MwCZJFb7Q&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1911962217013969359?t=qP0EqvA205oGIkv2Zj5mfA&s=19