কলকাতার মেট্রো রেল: এক নতুন গতির শহর। একটি প্রতিবেদন।
কলকাতা মেট্রো রেল সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন
কলকাতা শহরের গর্বের অন্যতম প্রতীক হল মেট্রো রেল। ভারতের প্রথম ভূগর্ভস্থ রেলপথ হিসাবে কলকাতার মেট্রো রেল ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর প্রথম যাত্রা শুরু করে এসপ্ল্যানেড থেকে ভবানীপুর (বর্তমান নেটাজি ভবন) পর্যন্ত। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ শহরের গণপরিবহনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দেয়।
মেট্রো রেলের জন্মলগ্ন থেকেই এর মূল লক্ষ্য ছিল শহরের ক্রমবর্ধমান যানজট ও পরিবেশ দূষণের মোকাবিলা করা। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রী কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা অন্যান্য গন্তব্যে পৌঁছাতে মেট্রোকে ভরসা করেন। সময় বাঁচানো, সাশ্রয়ী ভাড়া এবং দূষণহীন পরিবহণের কারণে মেট্রো সাধারণ মানুষের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে।
কলকাতার মেট্রো রেল বর্তমানে একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্কে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রথমে ছিল একটিমাত্র উত্তর-দক্ষিণ করিডোর (দমদম থেকে টালিগঞ্জ, বর্তমানে নোয়াপাড়া থেকে কবি সুভাষ), এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পূর্ব-পশ্চিম করিডোর (শিয়ালদহ থেকে সল্টলেক সেক্টর V হয়ে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত), এবং চলছে নতুন নতুন রুট নির্মাণের কাজ। যেমন জোকা থেকে তারাতলা পর্যন্ত নতুন মেট্রো রুট চালু হয়েছে এবং ভবিষ্যতে তা বেহালা থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে।
প্রযুক্তির ব্যবহারে কলকাতা মেট্রো রেল আরও আধুনিক হয়েছে। স্মার্ট কার্ড, কিউআর কোড, ডিজিটাল ডিসপ্লে এবং অ্যানাউন্সমেন্ট সিস্টেম যাত্রীদের অভিজ্ঞতাকে সহজ ও আরামদায়ক করে তুলেছে। স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ এসি কোচ এবং সময়নিষ্ঠ পরিষেবার জন্য মেট্রো রেল আজ অনেকের প্রথম পছন্দ।
তবে মেট্রো রেলের পথচলা সবসময় মসৃণ ছিল না। নির্মাণকাজে দেরি, আর্থিক সমস্যা, জমি অধিগ্রহণের জটিলতা ও মাঝে মাঝে দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও এর অগ্রগতিকে ব্যাহত করেছে। তবুও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমন্বয়ে ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় এই প্রকল্প আজ সফলতার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে।
কলকাতা মেট্রো রেল শুধু একটিমাত্র পরিবহণ ব্যবস্থা নয়, এটি শহরের একটি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলও তৈরি করেছে। প্ল্যাটফর্মের দেওয়ালে শিল্পকর্ম, কবিতার লাইন ও ঐতিহাসিক চিত্র শহরের সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। এটি শুধু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছানোর উপায় নয়, বরং একটি অভিজ্ঞতা।
পরিশেষে বলা যায়, কলকাতার মেট্রো রেল শহরের ধমনীস্বরূপ। এটি যেমন সময় বাঁচায়, তেমনই শহরের পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শকও। মেট্রো রেলের সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের মাধ্যমে আগামী দিনে কলকাতা আরও গতিশীল ও বাসযোগ্য শহরে রূপান্তরিত হবে, এ আশা রাখা যায়।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/KausikChak1234/status/1908586682317762809?t=unM7Nlx-q2D8dwS68wHnZA&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1908593452633239564?t=rqgpkFXc45q-OtO4eLAJSQ&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1908593903470866846?t=aGs5ba8qAE5cZY5avl0nuA&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1908595042333405400?t=N5ynmsVFvOSKCkLAmQc_RQ&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1908599014238412818?t=dp0fQAI_-05i-BBUCoSj4g&s=19
আমাদের রাজধানী শহর ঢাকাতে কয়েক বছর আগে মেট্রোরেল চালু হয়। মেট্রোরেল অনেক সময় বাচায়,যানজট ব্যতীত অল্প সময়ের মধ্যে গন্তব্য পৌঁছে দেয়। যার ফলে নগরবাসীর সবার পছন্দের কাতারে এক নম্বর রয়েছে মেট্রোরেল। কলকাতার মেট্রোরেলের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন পরে খুবই ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম।
ঢাকা মেট্রোতেও আছি চড়েছি ভাই৷ উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও গেছিলাম। সে অভিজ্ঞতাও বেশ ভালো৷ আপনার মন্তব্য পড়ে খুব ভালো লাগলো।