গ্রিনলাইন ভলভো বাসে দুর্গাপুর সফর : এক বিস্মৃতিহীন অভিজ্ঞতা

in আমার বাংলা ব্লগlast month

গ্রিনলাইন ভলভো বাসে দুর্গাপুর সফর : এক বিস্মৃতিহীন অভিজ্ঞতা

💮💮💮💮💮💮💮💮💮


IMG_20250427_113810_741.jpg

আজকের দিনটা শুরু থেকেই যেন ছিল অন্যরকম। সকালবেলা যখন বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলাম, তখন আকাশে হালকা মেঘের ছায়া, বাতাসে একটু শীতলতা। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রিনলাইন ভলভো বাসটা দেখে প্রথমেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ঝকঝকে বাস, চকচকে কাচের জানালা, আর তার ভিতরকার সাজসজ্জা এত সুন্দর ছিল যে মনটা যেন নিজে থেকেই হালকা হয়ে গেল।

বাসের মধ্যে ঢুকতেই নরম আসনের স্পর্শ আর এসির মৃদু ঠান্ডা বাতাস যেন গায়ে শীতল পরশ বুলিয়ে দিল। ভেতরের পরিবেশ ছিল এতটাই পরিচ্ছন্ন আর সাজানো গোছানো, মনে হচ্ছিল যেন কোনো চলমান বিশ্রামকক্ষের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। আমি জানালার ধারে একটা আসন বেছে নিলাম, যাতে চলার পথে বাইরের দৃশ্য দেখতে পারি।

বাস ছাড়ল নির্দিষ্ট সময়ে। কলকাতার ব্যস্ত রাস্তা ধীরে ধীরে পেছনে পড়ে রইল, আর সামনে খুলে গেল প্রশস্ত হাইওয়ের দৃশ্য। জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখছিলাম। কখনো ফাঁকা মাঠ, কখনো দুরন্ত ছোট গ্রাম, আবার কখনো সারি সারি গাছের ছায়াময় পথ। বাসের মৃদু দুলুনি আর জানালায় আসা ঠান্ডা বাতাসে চোখ যেন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল।

IMG_20250427_113357_010.jpg

IMG_20250427_113347_616.jpg

প্রায় দেড় ঘণ্টা চলার পর বাস থামল শক্তিগড়ে, ছোট্ট একটা বিরতির জন্য। শক্তিগড়, যা তার বিখ্যাত ল্যাংচা আর মিষ্টির জন্য সুবিখ্যাত, সেখানে পা দিয়েই যেন আরেক রকম প্রাণচাঞ্চল্য অনুভব করলাম। বাস থেকে নেমে হালকা করে শরীর ঝাঁকি দিলাম, তারপর হাতের ক্যামেরা বের করলাম। এই মুহূর্তগুলো ধরে রাখতেই হবে। এমন মনে হল যেন সময়টাকে ছবিতে আটকে রাখতে পারলেই এই সফরের পূর্ণতা আসবে।

প্রথমে ক্যামেরায় ধরলাম রাস্তার দু'পাশে সাজানো ল্যাংচার দোকানগুলো। মিষ্টির সুবাসে ভরা বাতাসে যেন আরও মন ভরে উঠছিল। কিছু দোকানের সামনে মানুষের ভিড়, কেউ ল্যাংচা কিনছে, কেউ আবার চায়ের কাপ হাতে গল্পে মশগুল। এরই মাঝে পেছনে ছায়ায় ঢাকা একটা সরু রাস্তা চোখে পড়ল, যা হারিয়ে যাচ্ছে দূরত্বের মধ্যে। সেই দৃশ্যটাও ক্যামেরায় বন্দি করলাম।

একটু এগিয়ে গিয়ে একটা পুরনো শিবমন্দিরের ছবি তুললাম, যেখানে মাথার ওপরে ছায়া ফেলে রেখেছে এক বিশাল বটগাছ। মুহূর্তগুলো যেন একে একে জমা হতে থাকল ক্যামেরার লেন্সে আর হৃদয়ের ভাঁজে।

বিরতির পরে আবার বাসে ফিরে এলাম। বাস ছাড়তেই যেন আবার মন ভরে উঠল নতুন আনন্দে। এইবারের যাত্রাপথ আরও মোলায়েম লাগছিল। কখনো চোখ বুজে নিয়েছিলাম সামান্য বিশ্রাম, কখনো আবার জানালার কাঁচের ওপারে হারিয়ে যাওয়া দৃশ্যাবলী দেখে মনে হচ্ছিল যেন জীবনের এক শান্ত নদীর ধারে বসে আছি।

IMG_20250427_113805_430.jpg

IMG_20250427_113520_510.jpg

চার ঘণ্টার এই সফর মুহূর্তের মধ্যেই কেটে গেল। দুপুরের দিকে দুর্গাপুর পৌঁছলাম। নতুন শহরের পরিচ্ছন্ন রাস্তা আর আলো ছায়ার খেলা মনটাকে আরও আনন্দে ভরে দিল।

এই ভ্রমণ শুধু একটি স্থানান্তর ছিল না, বরং ছিল অনুভবের এক মধুর সফর। গ্রিনলাইন ভলভো বাসের আরামদায়ক সঙ্গ, শক্তিগড়ে ছবির মতো মুহূর্তগুলোর বন্দি হওয়া, আর সমগ্র যাত্রাপথের শান্ত সৌন্দর্য। সব মিলিয়ে এই ভ্রমণ জীবনের স্মৃতির খাতায় এক উজ্জ্বল পাতা হয়ে রয়ে যাবে।


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস
আনএডিটেড
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ

🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1LsUc8S2zjHiaW6UcX2M5SAfbrPcxiCjQzCc6aZJSjUDgt85bSStrwGCUjZMWCDKxNata4NQ2cZTKGxsY.png

FrDSZio5ZCzUamf35asauSgs1tnNGCc8exBrDii52qi3JpjTyYCF9oFoYfs1EV4VTnFw6faxzt5X7uHiwMAHmLS3ef2Jb2JcxHBkpRBd2y...Qa3Q3c7Biv4c8mKsr8DHNVYqqpVomFSv1wmkMCbhs7oCjb14sjkA3vxAfSRk8QPzNZ5UirrZUzvHCXygHCV49RVVZBeTFCeo47WcQXnjLYGy2RNdJQycJW4cN.jpeg

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last month 

গ্রিনলাইন ভলভো বাস এগুলো আমাদের দেশেও ভালো সার্ভিস দেয়। আপনার ভ্রমনের অভিজ্ঞতা ভালো লাগলো।