গ্রীষ্মকাল বনাম শীতকাল – এক আত্মস্বীকৃত পছন্দ ও পর্যালোচনা
গ্রীষ্মকাল বনাম শীতকাল – এক আত্মস্বীকৃত পছন্দ
বছরের ছয়টি ঋতুর মধ্যে গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল দুটি একেবারে বিপরীত প্রকৃতির। একজন মানুষের পছন্দ-অপছন্দ যেমন ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হয়, তেমনি ঋতু নির্বাচনেও একেকজনের রুচি ভিন্ন। আমার নিজের কথা বললে, গ্রীষ্মকাল আমার একেবারে অপছন্দের ঋতু। প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত, ঘামে ভেজা জামাকাপড়, রোদে ঝলসে যাওয়া শরীর আর হঠাৎ হঠাৎ সন্ধ্যা বেলা ঝড়-বৃষ্টি। সব মিলিয়ে এই সময়টা সত্যিই অত্যন্ত কষ্টকর। তার তুলনায় শীতকাল অনেক বেশি সহনীয়, প্রশান্তিকর ও আরামদায়ক।
গ্রীষ্মকাল মানেই প্রচণ্ড গরম। ভোরবেলা সূর্য উঠতেই শুরু হয় ঘামার পালা। সকাল আটটার মধ্যেই যেন সূর্যের উত্তাপ অসহ্য হয়ে ওঠে। যাদের প্রতিদিন স্কুল, কলেজ বা অফিসে যেতে হয়, তাদের জন্য এই গ্রীষ্ম একটি চরম দুর্বিষহ সময়। আমিও একজন শিক্ষক, প্রতিদিন সকালবেলা গরমে হাঁপাতে হাঁপাতে স্কুলে পৌঁছাতে হয়। বাস, অটো কিংবা রিকশা। সবকিছুতেই প্রচণ্ড ভিড়, ধুলোবালি আর ঘামের গন্ধে মাথা ঘুরে যায়। ক্লাস নেওয়ার সময়েও ঘাম ঝরে পড়ে কপাল থেকে, বোর্ডে লিখতে গিয়ে বারবার রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে হয়। এমনকি দুপুরের দিকে কিছুক্ষণের জন্য যদি বৃষ্টি হয়, তবু শান্তি মেলে না৷ বরং জল কাদায় পরিস্থিতি আরও বেশি অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে।
শুধু বাহ্যিক অস্বস্তি নয়, গ্রীষ্মকালে মানুষের মেজাজও খিটখিটে হয়ে যায়। তীব্র গরমে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, খাওয়াদাওয়ার রুচি নষ্ট হয়, এবং অনেক সময় শরীরে পানি ও লবণের ঘাটতি দেখা যায়। তাপপ্রবাহের কারণে অসুস্থতাও দেখা যায়, বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে। রাতে ঘুমানো যায় না ঠিকমতো, ফ্যান বা কুলার চললেও শান্তি মেলে না।
তার তুলনায় শীতকাল যেন স্বর্গের পরশ। হিমেল হাওয়া, পরিষ্কার আকাশ আর সূর্যের নরম আলো। সবকিছুতেই এক রকম প্রশান্তি থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি শরীরে একটা হালকা কাঁপুনি লাগে, তা একধরনের মধুর অনুভূতি। রাস্তার ধারে দোকানে গরম চা কিংবা লুচি-তরকারি খাওয়ার আনন্দ গ্রীষ্মে কল্পনাও করা যায় না। শীতকাল মানেই পিকনিক, বইমেলা, মকর সংক্রান্তি, পৌষপার্বণ—সবই আনন্দের ছোঁয়ায় ভরপুর।
শীতকালে স্কুল যাওয়াটাও অনেক সহজ। হালকা ঠান্ডা হাওয়ায় শরীর সতেজ থাকে। পরিশ্রম করলেও ঘাম হয় না, ফলে কাজের প্রতি আগ্রহও বাড়ে। ক্লাসে পড়ানো হয় নিরবিচারে, ছাত্রছাত্রীরাও মনোযোগ দিয়ে শোনে। রাতেও ভালো ঘুম হয়, কম্বলের নিচে একটা আরামদায়ক অনুভব থাকে।
তাই সবদিক বিবেচনা করলে আমি মনে করি, গ্রীষ্মকাল যতটা কষ্টের, শীতকাল ততটাই আরামের। প্রকৃতির এই চক্র হয়তো নিয়মমাফিক চলে, কিন্তু আমাদের হৃদয়ে স্থান করে নেয় কিছু নির্দিষ্ট ঋতুই। আমার হৃদয়ে শীতকালের জন্য এক আলাদা স্থান রয়েছে, যেটা গ্রীষ্ম কোনদিনও নিতে পারবে না। অতএব, আমার কাছে শীতকালই বছরের সবচেয়ে প্রিয় সময়।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
গ্রীষ্মকাল এবং শীতকালের মধ্যে যে বৈপরীত্য তুলে ধরা হয়েছে, তা অত্যন্ত সঠিক। গ্রীষ্মের তাপদাহে যে অস্বস্তি হয়, তার তুলনায় শীতকাল সত্যিই প্রশান্তিকর। শীতের ঠান্ডায় শরীর সতেজ থাকে, মনও শান্ত থাকে, যা গ্রীষ্মে পাওয়া যায় না। লেখাটি পড়ে শান্তি পেলাম ভাই।
https://x.com/KausikChak1234/status/1915058498934546898?t=JUB5GfH13GXGS5vWWjbQ3A&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1915059060564693084?t=Nsx9RGj3JDrSKyXzlRU3SA&s=19