একুশের কবিতা৷ মাতৃভাষার অধিকার৷ আজকের কবিতা - সীমান্তের দাবী।
একুশের কবিতা৷ মাতৃভাষার অধিকার।
আপনারা জানেন গতকাল ছিল একুশে ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালে ঢাকার রাজপথে পাকিস্তানি সৈন্যের হাতে বেঘোরে খুন হয়ে যায় ১১ জন তরতাজা তরুণ। আর সেই ঘটনাকে মনে রেখে আমরা আজও প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালন করে আসছি। ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
আজ ২২ শে ফেব্রুয়ারি। আপনারা অনেকেই জানেন যে ১৯৫২ সালের আজকের দিনটিতেও ঢাকার রাজপথে নির্বিচারে গুলি চলেছিল এবং সেখানে শফিউর রহমানের মত আরো অনেক যুবকের দেহ লুটিয়ে পড়েছিল রাজপথে। তারপর তারা মৃত্যুবরণ করে বাংলা ভাষাকে বুকে লালন করে। সেই মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা এবং সম্মান জানিয়ে আমি একটি কবিতা শেয়ার করলাম আজ ব্লকের পাতায়। আজকের কবিতাটির মূল বিষয়বস্তুই হলো ভাষা এবং একুশে ফেব্রুয়ারি। যে দিনে বাংলার মাটিতে সেই ১১ জন বীর যোদ্ধা প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন, সেই দিনটি আজও অমলিন। আমার কবিতার মাধ্যমে আমি সেই দিনটিকেই আরো উজ্জ্বলভাবে ধরে বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ ত্যাগ করা সেই ১১ জন বীর সৈনিককে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানালাম। তাঁরা তাদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিল বাংলা ভাষার অধিকার। আজ যে ভাষার ভিত্তিতে একটি দেশ গঠিত হয়েছে, সেই দেশের মাটি ভিজে গিয়েছিল ভাষা শহীদদের রক্তে। তাই আমরা কোনদিন তাদের আত্মত্যাগের কথা বলতে পারিনা। চিরকাল সেই ত্যাগকে বুকে ধরে আমরা বাংলা ভাষাকে ভালোবাসতে শিখেছি। আর নিজের ভাষার সার্বভৌম অধিকার বজায় রাখতে জেনেছি। কোন আগ্রাসনকে আমরা আমল দেবো না। যেকোনো বহিরাগত বাধা নস্যাৎ করে আমরা এগিয়ে যাব আমাদের ভাষাকে বলিয়ান করতে। যে ভাষায় রবীন্দ্র নজরুল আছেন, যে ভাষায় জীবনানন্দ আছেন, সেই ভাষাই আমার মায়ের ভাষা। আর মাতৃভাষার স্বার্থ রক্ষায় আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আবার অন্ধকার নেমে এলে জেগে উঠুক এগারো বীর শহীদের তীব্র হুঙ্কার।
আসুন তবে এবার কবিতাটি পড়ে নেওয়া যাক। কবিতাটির ছত্রেছত্রে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ। আর সেখানে নিজের সার্বভৌমত্বের কথা বেশ স্পষ্ট।
💐 কবিতা 💐
সীমান্তের দাবী
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
স্তব্ধতার উৎসব মিলেমিশে গেছে দু'পাড়ে
জানান দিচ্ছে অসম্পূর্ণ কাঁটাতার
কে এসে বিছিয়ে গেল জাব্বারের বিচ্ছিন্ন পোশাক?
আধোয়া রক্তের স্বাদ একার
ভাষা বলতে আমি সেই নাব্যতাকে বুঝি...
দমবন্ধ রাজপথে আজও মিছিলে হাঁটে কেউ
গুলির শব্দ ফিরে আসছে শহরে
অনাগত শব্দকোষের দাম দিচ্ছে দেশাত্মবোধ-
বিশ্ববিদ্যালয়ের তোরণের দিকে তাকিয়েছ?
ঝলসে গেছে দাহ্য সংবাদ
এরপর মিছিল বাঁক নিয়েছে একা
শহীদ মিনারে জমে যাচ্ছে একুশের দাবী...
প্রতিটি লাল বুলেটের দাম আজ চড়া
সীমান্ত এখনও বাংলায় খোঁজে মরদেহের আঙুল।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/KausikChak1234/status/1893512509694304464?t=xdhkNdYitVFeAnoAX99wRQ&s=19
Daily tasks-
এই কবিতার মধ্যে সীমান্তের দুঃখ এবং সংগ্রামের এক কঠিন চিত্র ফুটে উঠেছে। "অসম্পূর্ণ কাঁটাতার" আর "আধোয়া রক্তের স্বাদ একার"- এই ধরনের ভাষা দিয়ে আপনি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, একদিকে স্বাধীনতার আশা, অন্যদিকে সীমান্তের যন্ত্রণায় ভরা বাস্তবতা। "প্রতিটি লাল বুলেটের দাম আজ চড়া"- এটি যেন আমাদের ইতিহাসের ব্যথা আর শোককে তুলে ধরে, যেখানে প্রতিটি সংগ্রাম এক মূল্যবান শিক্ষা।
আমার লেখা কবিতাটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো। এত সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থেকেছেন বলে অনেক ধন্যবাদ।
দাদা দারুন একটি কবিতা লিখেছেন কবিতাটি পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।মাতৃভাষাকে নিয়ে এত সুন্দর ভাবে কবিতাটি লিখেছেন
পড়ে খুব ভালো লাগলো।সত্যি দাদা আপনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমিও চেষ্টা করছি লেখার শিখব আপনাদের কাছ থেকে আরো। ধন্যবাদ দাদা দারুন একটি কবিতা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।
আমার লেখা আপনার ভালো লেগেছে শুনে খুব ভালো লাগলো আপু। চেষ্টা করি ভালো কবিতা আপনাদেরকে পড়াতে। এভাবে মন্তব্য করে পাশে থাকলেন বলে ধন্যবাদ।