এত বড় দেশ হয়েও ভারতের ফুটবলে পিছিয়ে পড়ার কারণ। একটি অনুসন্ধান।
ফুটবলে ভারতের পিছিয়ে থাকার কারণ
🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏
ভারত, যেখানে ক্রিকেট ধর্মের মতো গণ্য হয়, সেখানে ফুটবল একটি জনপ্রিয় খেলা হয়েও আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্যের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। যদিও কলকাতা, গোয়া, কেরালা, বেঙ্গালুরু এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অংশে ফুটবল অত্যন্ত জনপ্রিয়, তবুও বিশ্ব ফুটবলে ভারতের অবস্থান তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা কিংবা এমনকি এশিয়ার কিছু দেশ যেখানে ফুটবলে নিয়মিত উন্নতি করছে, সেখানে ভারত এখনও বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নিতে পারেনি। প্রশ্ন উঠতে পারে—এতগুলি ফুটবল ক্লাব, সমর্থক এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও কেন ভারত ফুটবলে উন্নতি করতে পারছে না?
১. পরিকাঠামোর অভাব
ফুটবলে উন্নতির জন্য অত্যাধুনিক পরিকাঠামো যেমন উন্নত স্টেডিয়াম, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ভালো মানের কোচ এবং চিকিৎসা সুবিধা প্রয়োজন। কিন্তু ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে এই পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) এবং আই-লিগের প্রচেষ্টায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে তা এখনও আন্তর্জাতিক মানের থেকে অনেক পিছিয়ে।
২. ফুটবল উন্নয়নে সরকারি অনাগ্রহ
ভারতের ক্রীড়া নীতিতে ফুটবল তেমন অগ্রাধিকার পায়নি। যেখানে ইউরোপ বা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলিতে ফুটবলের জন্য আলাদা করে সরকারি প্রকল্প নেওয়া হয়, সেখানে ভারতে কেবল কয়েকটি রাজ্যে ফুটবল উন্নয়নের জন্য বিশেষ উদ্যোগ দেখা যায়। অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ক্রিকেটকেই বেশি গুরুত্ব দেয়, যার ফলে ফুটবলের যথাযথ বিকাশ হয় না।
৩. তৃণমূল পর্যায়ে প্রশিক্ষণের অভাব
যেকোনো খেলায় সফল হতে গেলে তৃণমূল পর্যায়ে উন্নত প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি কিংবা ফ্রান্সে ফুটবলারদের ছোট বয়স থেকেই পেশাদার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু ভারতে বেশিরভাগ ফুটবল একাডেমি শহরকেন্দ্রিক এবং সীমিত সংস্থানের মধ্যে পরিচালিত হয়, ফলে গ্রাম বা মফস্বল এলাকার প্রতিভারা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
৪. জনপ্রিয়তা ও মিডিয়ার ভূমিকা
ভারতে ফুটবল প্রচারের ক্ষেত্রেও মিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। ক্রিকেট নিয়ে যেমন চব্বিশ ঘণ্টা সংবাদমাধ্যমে আলোচনা হয়, ফুটবল নিয়ে তেমন কিছু দেখা যায় না। ইউরোপের বিভিন্ন লিগের প্রচার ভারতে অনেক বেশি হলেও, দেশের ঘরোয়া লিগগুলির প্রতি দর্শকদের আগ্রহ তুলনামূলক কম।
৫. অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা
ফুটবল একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের খেলা, যেখানে একটি খেলোয়াড়কে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছতে অনেক সময় ও প্রচেষ্টা লাগে। ইউরোপের দেশগুলিতে ক্লাবগুলো তরুণ খেলোয়াড়দের লালন-পালন ও উন্নতির জন্য বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করে। কিন্তু ভারতে ফুটবল ক্লাবগুলো এখনও সেই ধরনের বিনিয়োগ করতে পারে না।
৬. আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভাব
ভারতের জাতীয় ফুটবল দল আন্তর্জাতিক মানের দলগুলোর সঙ্গে খুব কম ম্যাচ খেলে। যেখানে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান কিংবা ইরান নিয়মিত ইউরোপীয় ও দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলোর সঙ্গে খেলতে অভ্যস্ত, সেখানে ভারত সাধারণত এশিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় খেলার অভিজ্ঞতা কম।
৭. পেশাদারিত্বের অভাব
ভারতের ফুটবলে এখনও সম্পূর্ণ পেশাদারিত্ব আসেনি। ইউরোপ বা দক্ষিণ আমেরিকার খেলোয়াড়রা অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে, উন্নত ডায়েট মেনে চলে এবং ক্রীড়া মনোবিজ্ঞানের সাহায্য নেয়। ভারতে এই বিষয়ে এখনও যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয় না, ফলে খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেন না।
ভারতে ফুটবলের অগ্রগতির জন্য আরও পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তৃণমূল স্তর থেকে উন্নত প্রশিক্ষণ, আধুনিক পরিকাঠামো, সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা, এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করলে ভারতীয় ফুটবলও বিশ্ব মঞ্চে নিজের জায়গা করে নিতে পারবে। দেশীয় লিগগুলিকে আরও আকর্ষণীয় করতে হবে, খেলোয়াড়দের উপযুক্ত সুযোগ দিতে হবে এবং মিডিয়ার সাহায্যে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে। এই প্রচেষ্টাগুলো যদি ধারাবাহিকভাবে করা যায়, তবে ভবিষ্যতে ভারতও হয়তো বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নিতে পারবে।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁক ও ৫% এবিবি চ্যারিটিকে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/KausikChak1234/status/1907864596771385453?t=5PqM9YlaNL3Hd8zlTHfXVA&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1907865465218896319?t=899renrm_Uv7bY0F3tYVIg&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1907865874532614262?t=uSrllr5zn7qCV3hLOXi9Zw&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1907866306638197206?t=fbnhFOkAl8zu87t8-aTkgA&s=19
যেহেতু আমি একজন ফুটবল ফ্যান এবং নিয়মিত ফুটবল দেখি। এই ব্যাপার গুলো নিয়ে আমি নিজেও মাঝে মাঝে চিন্তা করি। আমি এখানে সবচাইতে বেশি দায়ী করব সিস্টেম কে। ইউরোপের দেশগুলো তে পাঁচ বছরের সব ছেলেরা এলাকার ফুটবল একাডেমি তে ছোটে। এবং সেগুলো থেকে বেরিয়ে আসে এক একটা প্রতিভা। কিন্তু আমাদের দেশে অথবা আপনাদের ওখানে ঐরকম একাডেমি এলাকায় কেন পুরো জেলাতেও পাওয়া যাবে না।
ঠিক বলেছেন ভাই। তাই আমরা ফুটবলে এতটা পিছিয়ে আছি। আপনার সুচিন্তিত মন্তব্য ভালো লাগলো