একটি বইমেলা ও কিছু আশঙ্কার প্রহর৷ আমরা কেন আজ বইবিমুখ।
বর্তমানের বইবিমুখ বাঙালি। এক তীব্র আশঙ্কার প্রহর।
আজ বেশ কিছুটা সময় কাটল আরো একটি বইমেলায়। বইমেলা মানেই যে কিছুটা ভালো সময় কাটানো তা আপনাদের আগেই বলেছি। আজ উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে আয়োজিত পানিহাটি বইমেলায় কবিতার আলোর পক্ষ থেকে বসেছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। কবিতার আলো পত্রিকাটি সম্পাদনা করার সুবাদে বিভিন্ন মেলায় বসবার অভিজ্ঞতা হয়েছে। এবারে তাই সোদপুরে অনুষ্ঠিত পানিহাটি বইমেলায় বসে আরো কিছু নতুন অভিজ্ঞতার সংযোজিত হলো। বিশেষ করে একটি জিনিস দেখলাম। বইমেলায় মানুষের পরিমাণ ভীষণ কম। দোকানগুলি বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসে আছে সারা সন্ধে৷ কোন স্টল নেই সেখানে? কলকাতার বিভিন্ন বড় বড় প্রকাশকের দোকানে সাজানো রয়েছে প্রচুর বই। কিন্তু আমি রাত আটটা পর্যন্ত থেকেও সেখানে খুব একটা জনসমাগম দেখলাম না। কলকাতা বইমেলা ছাড়া অন্যান্য বইমেলা গুলির এটি একটি বিরাট সমস্যা। শুধুমাত্র যদি বইমেলাগুলিতে বড় জলসা বা সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তবে মানুষের আগমন ঘটে। কিন্তু শুধুমাত্র বইয়ের পসরা সাজিয়ে জনসমাগম ঘটানোর মতো দিন এখন আর নেই।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি মানুষ বর্তমানে বই পড়তে খুব একটা পছন্দ করেন না। কিছু বইপ্রেমী মানুষ বাদে সকলেই প্রায় বই বিমুখ। তাই বইমেলাগুলিতে যতটা পরিশ্রম এবং যতটা অর্থ ব্যয় হয় তা কখনোই ওঠে না। তাই বর্তমান যুগে প্রকাশ হোক এবং ম্যাগাজিন, কেউই খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পারে না। এক অদ্ভুত সমাজে আমরা বাস করি। যেখানে বইয়ের কদর নেই সেখানে কি সত্যই শিক্ষা জাতির মধ্যে প্রবেশ করতে পারে? আসলে বর্তমানে আমরা এতটাই ডিজিটাল টেকনোলজি বা প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি যার ফলে বইয়ের কদর ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। তাই বর্তমান প্রজন্ম আর বইমুখি হচ্ছে না। যার ফলে হস্তশিল্প মেলা বা খাদ্য মেলাতে যে ধরনের ভিড় হয় তা কখনোই পুস্তক মেলায় দেখা যায় না। হাজার হাজার পুস্তক সাজিয়েও কোন মানুষের সমাগম সেখানে চোখে পড়ে না। বিভিন্ন ম্যাগাজিনগুলি দিনে একটি দুটি পত্রিকা বিক্রি করতে পারে কিনা সন্দেহ। তবু বিভিন্ন বই মেলাতে গিয়ে আমাদের বসতে হয়। মানুষের সামনে তুলে ধরতে হয় আমাদের সাহিত্যকর্ম গুলি। যদি একজন মানুষও এসে দুবার নাড়াচাড়া করে দেখেন বইগুলি, তবে ভালোলাগা কাজ করে নিজের অনুভূতিতে।
তাই এই ধরনের এলাকাভিত্তিক বইমেলাগুলিতে বসবার অভিজ্ঞতা আমার একেবারেই ভালো নয়। এখানে যে পরিমাণ বইয়ের প্রকাশক বসেন, ঠিক তত পরিমাণ পাঠক সেখানে তারা পায় না। তবু বসতে হয়। কারণ বসাটাই নিয়ম। আর সেই নিয়মের বশবর্তী হয়ে আমরা প্রত্যেকেই নিয়ম করে বইমেলাগুলিতে বসি। কিন্তু দিনের শেষে একজন মানুষও না এলে কোথাও যেন মনে হয় আমরা এক অতল সমুদ্রের গভীরে ডুবে যাচ্ছি। যেখানে ভীষণ অন্ধকার আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। যে সমাজ বইহীন ভাবে গড়ে ওঠে, সেই সমাজে কখনো শিক্ষা সার্বিকভাবে প্রবেশ করতে পারে না। বর্তমানে মানুষ যেভাবে শুধুমাত্র রিল দেখে এবং ডিজিটাল দুনিয়ায় সময় কাটান, তাতে একটি তীব্র আশঙ্কা তো হয়ই। আসলে আমরা কোন পথে এগিয়ে চলেছি? এভাবে পড়াশোনাহীন থাকতে থাকতে আমরা একটি সম্পূর্ণ প্রজন্মকেই নষ্ট করে দিচ্ছি না তো? নিজেদেরকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে এই প্রশ্নটি করা আজ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 1/7) Get profit votes with @tipU :)
https://x.com/KausikChak1234/status/1905332516099424717?t=UI3yMgMBeho8_dxNDRDTGw&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1905333283627696642?t=w0KorG6sgq8L2qys3qh9Tw&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1905340424941961236?t=_kypHypUIO0e-rFxAbXbBA&s=19