চৈতন্য জীবনীগ্রন্থকারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে? একটি তুলনামূলক আলোচনা।

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago

চৈতন্যজীবনী গ্রন্থকারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে?

💮💮💮💮💮💮💮💮💮


1737661134477.jpg

নবদ্বীপে চৈতন্য মূর্তি


🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏


এই প্রবন্ধে কয়েকটি চৈতন্য জীবনীগ্রন্থ এবং তার পদকর্তাদের কথা আলোচনা করব ঠিক করেছি। চৈতন্যদেবের জীবনীপর্যায়গুলো যে সকল গ্রন্থে রূপ পেয়েছে, তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হিসাবে ধরা হয় 'শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত' কে। এই গ্রন্থের গ্রন্থকার শ্রী কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী। চৈতন্য গবেষকদের মতে এই গ্রন্থ চৈতন্যজীবনের সর্বাধিক প্রামাণ্য দলিল। ১৪৯৬ ক্রিস্টাব্দে এক বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম হয় গোস্বামীর। জীবনের শেষ পর্বে পৌঁছে এক ব্রজবাসীর ইচ্ছানুসারে তিনি সৃষ্টি করেন 'চৈতন্যচরিতামৃত'। তাঁর কাব্যসৃষ্টিতে মূল প্রেরণা ছিল গুরু রঘুনাথ দাসের চৈতন্য সঙ্গলাভ এবং পূর্ব গ্রন্থকার মুরারি গুপ্ত রচিত 'কড়চা'। চৈতন্য জীবনীকাব্যগুলির মধ্যে অন্যতম এই 'মুরারি গুপ্তের কড়চা'। সব গ্রন্থের মধ্যে এটিই সর্বপ্রথম রচিত চৈতন্যপদ। অন্য একটি প্রধান জীবনীগ্রন্থ বৃন্দাবন দাস রচিত 'শ্রীচৈতন্যভাগবত'। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মতানুযায়ী তিনি চৈতন্য লীলার ব্যাস। ভক্তিবাদ ও কাব্যমাধুর্যে এই গ্রন্থ যে শ্রেষ্ঠ, তা এককথায় অনস্বীকার্য। অন্যতম চৈতন্য পর্ষদ শ্রীবাস পন্ডিতের ভাইঝি নারায়ণী দেবীর গর্ভে ১৫০৭ ক্রিস্টাব্দে অবতীর্ণ হন বৃন্দাবন দাস। ১৫৩৫ ক্রিস্টাব্দে তিনি রচনা করেন চৈতন্যভাগবত। পূর্বে নাম চৈতন্যমঙ্গল থাকলেও পরে লোচনদাসের চৈতন্য জীবনী গ্রন্থের একই নাম থাকার সুবাদে বৃন্দাবন দাসের কাব্যকে চৈতন্যভাগবত নামে চিহ্নিত করা হয়। চৈতন্যচরিত্রে ভগবৎ দর্শন আরোপ করে তিনি চৈতন্যদেবের মহিমাকে গৌরবান্বিত করেন, একথা সকল বৈষ্ণব সমাজ মানে। অন্য একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ হলো লোচনদাস রচিত 'চৈতন্যমঙ্গল'। উৎকৃষ্ট এই গ্রন্থ মোট চারটি পর্যায়ে বিভক্ত- সূত্রখণ্ড, আদিখণ্ড, মধ্যখণ্ড, শেষখণ্ড। চারখণ্ডে রচিত এই গ্রন্থের পদগুলি বৈষ্ণব কীর্তনেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘুরে ফিরে আসে। বর্তমানে গবেষণার ক্ষেত্রে এইসকল জীবনীগ্রন্থই একমাত্র মাধ্যম এবং চৈতন্যসূত্র।

1737661147701.jpg

চৈতন্যদেবের স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী পুজিত চৈতন্য মূর্তি

চৈতন্য পূর্ব যুগে রচিত বিভিন্ন বৈষ্ণবপদকর্তাদের মধ্যে মৈথিলী ভাষার প্রয়োগ বেশ লক্ষণীয়। বড়ু চন্ডিদাস বা বিদ্যাপতির প্রতিটি পদে আমরা এই রীতি লক্ষ্য করি। মূলত রাধা-কৃষ্ণের পার্থিব প্রেমভাব ও অষ্টসখীর কৃষ্ণ মাথুরের বর্ণনার দিব্যভাবে আলোকিত এইসকল গ্রন্থ। কবি জয়দেবও তাঁর 'গীতগোবিন্দম'এ উদার কাব্যমাধুর্যে গোপিনীদের কৃষ্ণ বিরহের কথা লিখেছেন, যেখানে আমরা প্রথম সরল কথ্য সংস্কৃত ভাষার প্রয়োগ দেখতে পাই। কিন্তু আদ্যোপান্ত বাংলা শব্দের প্রয়োগে নিপূণভাবে বৈষ্ণব কাব্যরস বিতরণের ধারা তৈরী হয় চৈতন্য পরবর্তী কাব্যে। চৈতন্যদেব বাংলার এক প্রকৃত যুগভেদ, সময়ের মানদণ্ড। তাঁর জন্মের পর যে সকল চৈতন্যপদ ও রাধাকৃষ্ণ জুগলকীর্তন রচনা হয়, সেগুলিতে আধুনিক বাংলা ভাষার দক্ষ লিপিকরণ বেশ লক্ষণীয়। আজও বাংলা ভাষা ও বাঙালির কাছে এগুলি পরম সম্পদ। সমস্ত আলোচনা থেকে আমরা বেশ বুঝতে পারি যে গৌর আবির্ভাব বাংলার রাজনৈতিক, সামাজিক, কাব্যিক ও লৌকিক মানচিত্রে এক উজ্জ্বল ক্ষণ।

1737661163418.jpg

নবদ্বীপে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের সবথেকে উঁচু গৌরাঙ্গ মূর্তি

বিশেষ করে বাংলা ও উৎকলের মাটিতে তাঁকে আঁকড়ে যে ভাবাবেগ জন্মেছিলো, তা আজ প্রায় ৬০০ বছর পরেও অটুট। তাঁর মাত্র ৪৮ বছরের জীবনে দুটি বেশ সুস্পষ্ট অধ্যায় লক্ষ্য করা যায়। প্রথম ২৪ বছর জন্মস্থান নবদ্বীপে বাল্য বয়স থেকে কৈশোরে প্রবেশ এবং তারপর বাকি ২৪ বছর সন্ন্যাস গ্রহণের পরে তৎকালীন নীলাচলে(বর্তমানে পুরী বা শ্রীক্ষেত্র) অবস্থান। এই শেষ ২৪ বছরের মধ্যে দীর্ঘ ৬ বছর কাটিয়েছেন দাক্ষিণাত্যের স্থানে স্থানে। সুবিশাল ভারতবর্ষের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, তাঁর চরণধূলি পড়েনি, এমন যেন কোন স্থানই নেই। শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে অনাড়ম্বর, একলা যাত্রাপথে তাঁর সঙ্গী শুধু দুই ঠোঁটের মাঝে কৃষ্ণনাম এবং মনেপ্রাণে এক তীব্র আকুতি নাম মাহাত্ম প্রচারের। পরবর্তী বিভিন্ন পর্বে আমরা তাঁর ধর্মীয় গণআন্দোলন ও চেতনার অনেক উদাহরণ খুঁজতে চেষ্টা করবো। পুরীধামের শ্রী জগন্নাথদেব বৃন্দাবনের শ্রীকৃষ্ণরই অভিন্ন বিগ্রহ। তাই সন্ন্যাস গ্রহণের পর বৃন্দাবনধামে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও শচী মায়ের অনুমতিক্রমে তিনি নীলাচলবাসী হন(বাংলা থেকে নীলাচলের দূরত্ব ও অবস্থানগত সুবিধার জন্য মা তাঁকে এই অনুমতি দেন)। তাই তাঁর এই দুই লীলাক্ষেত্র (বাংলা ও উৎকল) আজও স্মৃতি বুকে ধরে জাগিয়ে রেখেছে ৬০০ বছরের অমলিন ইতিহাস। এমনকি শোনা যায় বর্তমান ওড়িশাতে চৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দির ও পুজনস্থলের সংখ্যা বাংলার থেকেও বেশি।


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস
আনএডিটেড
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ


🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

First_Memecoin_On_Steemit_Platform.png

hjh.png


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 5 months ago 

Daily tasks-

Screenshot_20250124-012553.jpgScreenshot_20250124-012526.jpgScreenshot_20250124-012450.jpg
 5 months ago 

যে সমস্ত অতীত ইতিহাস ও শিক্ষা বিষয়ের আলোচনা গুলো মানুষকে নতুন করে ভাবতে ও জানতে শেখায়। আমি সত্যন্যের বেশ কিছু গ্রন্থ পড়েছি। যেখানে অতীতের বিভিন্ন লেখকের লেখা বিভিন্ন কিছু জানতে শিখিয়েছে। এছাড়াও অতীতের বিভিন্ন কবিতাগুলো আমার ভালো লাগে। আজকে আপনার এই সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপনা দেখে যেন আরো অনেক কিছু জানার সুযোগ পেলাম।

 5 months ago 

আপনি শ্রীচৈতন্যদেবের বিভিন্ন গ্রন্থ পড়েছেন বলে মানবতার অনেক কিছু পাঠ নিয়েছেন ভাই। কারণ তিনি মানব ধর্মকেই সকলের আগে স্থান দিয়েছিলেন। আপনি এমন সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকলেন বলে ভালো লাগলো।

 4 months ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্য দেখে আমার খুব ভালো লাগলো। এমন ভাবেই আগামীতেও পাশে থাকবার চেষ্টা করবেন ভাই।