আজকের গল্পের পাতা। গল্পের নাম - রং নাম্বার। শেষ পর্ব।
আজকের পাতায় একটি গল্প - রং নাম্বার পর্ব ২
সেদিন ঘড়ির কাটা যেন আরো তাড়াতাড়ি এগোচ্ছে। আর এদিকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধীরে ধীরে টেনশন চড়ছে কমলিনীর। সেই নাম্বারে দুই একবার কলব্যাকও করেছে সে। কিন্তু নাম্বারটি বেজেই যাচ্ছে। কেউ রিসিভ করছে না। এই রিয়া রহস্য যে আসলে কী তা বুঝে উঠতেই ঘাম ঝরে যাচ্ছে তার। কিন্তু ফোনের কথামতো সেই আগন্তুকের সঙ্গে দেখা করতে যাবে না এমন সিদ্ধান্তও নিতে পারছে না সে। মনের কৌতুহল তাকে গ্রাস করছে ধীরে ধীরে। এমন ভাবেই ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলেছে নিয়মমত। কাটায় কাটায় ঠিক সাড়ে তিনটে বাজতেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল কমলিনী। আর সাড়ে চারটে বাজার ১০ মিনিট আগেই পৌঁছে গেল সঠিক গন্তব্যে। অর্থাৎ ধর্মতলার মোড়ে বিগ বাজারের ঠিক সামনেটা। মনে শুধু একরাশ কৌতুহল। ঠিক চারটে চল্লিশ মিনিটে তোর ফোন আবার কেঁপে উঠবে। সেই একই ফোন নম্বর। এবার তার বুকের মধ্যে যেন হাতুড়ির শব্দ শোনা যায়। ফোন ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতেই তার হাত কাঁপতে শুরু করেছে। তারপর অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে ফোনটা ধরল সে। ওপার থেকে আবার সেই ভারী কণ্ঠস্বর -
রিয়া?
আমি রিয়া নয়। আপনি কেন বারবার আমাকে রিয়া রিয়া করে সম্বোধন করছেন? কী চান আপনি? - খুব বিরক্ত হয়ে উত্তর দিল কমলিনী।
ওপার থেকে ভেসে এলো - ধর্মতলার মোড়ে আপনি তো অনেকক্ষণ এসে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনি যদি রিয়া নাই হবেন তবে এলেন কেন?
কমলিনী - আপনি কি আমায় ফলো করছেন? নাহলে আমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছি তা আপনি জানছেন কি করে?
এই কমলিনী এবং রিয়ার মধ্যে নামজনিত টানাপোড়েনে তার প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিন্তু সেই ভারী কণ্ঠস্বর কার? এই চিন্তা আর কৌতুহলের বশবর্তী হয়েই তার এখানে আসা। নাহলে কখনোই একজন অচেনা মানুষের কথায় সে আসতো না। কিন্তু কে যেন টেনে এনেছে তাকে। এক অনাবিল আকর্ষণ এক্ষেত্রে কাজ করেছে তার ভিতরে।
কিন্তু প্রায় ৪-৫০ টা বাজতে যায়। কিন্তু সেই ব্যক্তি কই? কমলিনী কোথায় কখন দাঁড়িয়ে সেই খবর সে জানে, কিন্তু সামনে কেন আসছে না? এই প্রশ্ন মাথার ভিতর উথালপাতাল হচ্ছে। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সে ফিরে যেতে যাবে, ঠিক তখনই পিছন থেকে সেই চেনা ভারী কণ্ঠস্বর।
রিয়া....
এই শেষ ২৪ ঘন্টায় রিয়া নামটার সঙ্গে যেন নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে কমলিনী। তাই একবার সেই নামটা কানে আসতেই চকিতে পিছন দিকে ঘুরে তাকাল সে। তার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে দাড়িওয়ালা এক বয়স্ক ব্যক্তি৷ বয়স ষাটের কাছাকাছি। পরনে সাদা পাঞ্জাবী আর জিন্স প্যান্ট। বুকের ভেতরটা ভয়ে যেন সব দলা পাকিয়ে যায় কমলিনীর। মুখ থেকে কথা সরে না৷ একদৃষ্টে সেই আগন্তুকের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে চিনতে চেষ্টা করে সে। কিন্তু কাস্মিনকালেও কখনো চোখে দেখেনি সেই ব্যক্তিকে। অবাক বিস্ময় তার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করলো -
কে আপনি?
সঙ্গে সঙ্গে উত্তর আসে - তুই আমায় চিনতে পারবি না। পরশুদিন তুই শান্তিনিকেতনে যা। সেখানে গিয়ে বিশ্বভারতীর অফিসে মিস্টার অনীক বোসের সঙ্গে দেখা করবি। আমি তোর জন্য সিট বুক করে রেখেছি। তুই তোর রেজাল্ট নিয়ে দেখা করলে সেখানে অ্যাডমিশন হয়ে যাবে। টাকা পয়সা নিয়ে একদম ভাবিস না। ঠিক সময়ে কলেজে পেমেন্ট হয়ে যাবে। তুই শুধু ভালো করে পোস্ট গ্রেজুয়েশনটা কমপ্লিট কর।
মানুষটাকে না চিনলেও চোখে জল চলে আসে কমনিলীর। সেই ব্যক্তি যেন তার কাছে দেবতার দূত। সভাপতি সে তার পরিচয় জানতে চায়। কিন্তু একটা কাগজ কমলিনীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে ভিড়ের মধ্যে সে গায়েব হয়ে যায়। কমলিনি দৌড়েও আর তাকে ধরতে পারেনি। অগত্যা বাড়ি ফিরে আসা ছাড়া তার আর কোন উপায় ছিল না। কিন্তু কে সেই ব্যক্তি? যে দেবদূতের মত এসে তার সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দিয়ে গেল।
বাড়ি এসে মাকে সমস্ত কথা উজার করে বললো সে। মাকে জিজ্ঞাসা করে, মা আমার নাম কি কখনো রিয়া ছিল? সাথে সাথে থমকে যায় মা-
তুই এসব প্রশ্ন কেন করছিস বাবা?
মা। বলো না। কিছু লুকিয়ো না আমার কাছে। বলো না আমি কমলিনী নাকি রিয়া?
হ্যাঁ৷ তোর ছেলেবেলার নাম রিয়া। তোর বাবার দেয়া নাম। তোর বাবা তখন মারা যায়নি। সকলে জানে তোর বাবা মৃত৷ কিন্তু তোর ছেলেবেলা থেকেই তিনি নিখোঁজ। অফিসে একটা খুনের ঘটনায় তোর বাবার উপর আঙুল উঠলে সেই থেকেই রহস্যজনক ভাবে তাঁকে আর খুঁজে পাইনি৷ আমার জীবনের সব রং মুছে যায় সেই থেকেই৷ কিন্তু তোকে এসব কথা বলে ওঠা হয়নি এতদিন। তারজন্য আমায় ক্ষমা কর মা।
মা৷ এ তুমি কী করেছ। কাল যে ফোন তুমি ধরেছিলে, সেই ফোনে কে ছিল জানো? আমার হারিয়ে যাওয়া বাবা। আমি তোকে সামনে পেয়েও ধরে রাখতে পারলাম না। তিনি আমাদের ওপর সবরকম ভাবে নজর রাখে মা৷ আমার সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দিয়ে গেলো৷ তুমি আমায় আগে বলোনি কেন মা।
বলিস কি মা! তিনি তবে এখনো বেঁচে আছেন? পারলে আমার কাছে তাকে ধরে আনিস একবার।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Daily tasks-
https://x.com/KausikChak1234/status/1894442958981591449?t=CcSUc4A6hl5m36G-D-ZYFA&s=19