কবিতার কাছে, কবিতার সঙ্গে। এক অন্তরঙ্গ অনুভব। একটি অনুষ্ঠানে কিছুক্ষণ।
অনেকদিন পর আজ কবিতার অনুষ্ঠানে বেশ কিছু সময়
কবিতা কেবল শব্দের খেলা নয়, কবিতা হৃদয়ের ভাষা। আজ অবনীন্দ্রনাথ সভাঘরে একটি কবিতানুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এই সত্যটি যেন আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করলাম। "অঙ্কুরোদগম" নামক সাহিত্যের পরিশীলিত সংগঠনের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানটি যেন হয়ে উঠেছিল কবিতার এক নিবিড় উৎসব। বহু কবিরা আজ তাঁদের স্বরচিত কবিতা পাঠ করলেন, এবং আমি সৌভাগ্যবান—এই সার্বজনীন সৃষ্টিশীলতায় আমিও নিজের কবিতা তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি।
অনুষ্ঠানে প্রবেশ করার মুহূর্ত থেকেই একটা উষ্ণতা, আন্তরিকতা অনুভব করছিলাম। অঙ্কুরোদগম দীর্ঘদিন ধরেই সাহিত্যচর্চায় নিবেদিত এক সংস্থা, যার সঙ্গে আমি বহুদিন ধরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত। তাই এই আয়োজনে উপস্থিত থাকা কেবল একজন কবি হিসেবে নয়, বরং এক প্রিয় আত্মীয়ের মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করার মতোই অনুভূত হচ্ছিল।
প্রতিটি কবির কবিতার ভেতর দিয়ে ফুটে উঠছিল জীবনের নানা রং, সমাজের নানা প্রতিচ্ছবি, প্রেম-বিরহের স্পর্শ এবং সময়ের তীব্রতম অভিঘাত। তরুণ কবির আবেগ আর প্রবীণ কবির অভিজ্ঞতা—দুটোরই মেলবন্ধন ঘটেছিল এই আসরে। শুধু শ্রোতা হিসেবে নয়, সহযাত্রী হিসেবে এই কবিতার যাত্রায় সামিল হতে পেরে হৃদয় জুড়ে এক আশ্চর্য প্রশান্তি অনুভব করেছি।
সব সময় কাজের ব্যস্ততায় সব অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়ে ওঠে না, কিন্তু আজ যেন সমস্ত দায়িত্ব কিছু সময়ের জন্য থেমে দাঁড়ালো। কবিতার ডাকে সাড়া দিয়ে অবনীন্দ্রনাথ সভাঘরে এসে মনে হলো—এই ভিন্নধর্মী মুহূর্তগুলোই তো জীবনের সঞ্চয়। এমন অনুষ্ঠানে গিয়ে কেবল কবিতা শুনি না, নিজের ভেতরের ‘আমি’কেও একটু খুঁজে পাই, নিজেকে নতুনভাবে ভাবি।
এমন আয়োজন কেবল সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে আনন্দের নয়, বরং একটি সামাজিক দায়িত্বের পরিচায়কও। যখন চারপাশে হিংসা, হানাহানি, বিভাজনের গল্প, তখন কবিতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় ভালোবাসার ভাষা, সংযোগের সেতু, এবং মানুষের গভীরতর সত্তা।
আজকের কবিতা পাঠের অভিজ্ঞতা আমাকে আবার মনে করিয়ে দিল—কবিতা কেবল লেখা বা পড়া নয়, কবিতা এক সত্তার সঙ্গে অপর সত্তার মিলনক্ষেত্র। কবিতার আসরে একত্র হওয়া মানে একসঙ্গে স্বপ্ন দেখা, সংবেদন ভাগ করে নেওয়া এবং নীরবতাকেও উচ্চারণ করে তোলা।
সব মিলিয়ে এই অনুষ্ঠান আমার কাছে শুধুই একটা সাহিত্যিক উপস্থিতি ছিল না, ছিল নিজের কাছে ফিরে আসার এক নির্জন পথ। আর সেই পথ দেখিয়েছিল কবিতা—নির্বাক, নিঃশব্দ, অথচ প্রাণময় ভাষায়।
এই মুহূর্তগুলোর জন্য, এই কবিতার সঙ্গে থাকার সুযোগের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কবিতা থাকুক, তার ছায়ায় আমরা বাঁচি।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1910758382040211965?t=4ORdnF6ptNupdu7QGB0c0Q&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1910759011973988659?t=NAhZTFcOVXAovwHB_28JHw&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1910759294531666410?t=G6tPOWvugLNLkA8UEcAaJw&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1910759648967184585?t=HsenmPRwFbetVIqRktdVLQ&s=19