রবিবারের আড্ডা - পর্ব ১১৭ | জীবনের গল্প - পর্ব ১৭
ব্যানার ক্রেডিট @hafizullah
সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি আমার বাংলা ব্লগের নতুন আয়োজন জীবনের গল্পের শো-তে । মূলত আমরা যেহেতু প্রথম থেকেই বলেছিলাম, রবিবারের আড্ডার কিছুটা ভিন্নতা হবে, ঠিক সেই ভিন্নতার জায়গা থেকেই, এই সংযোজন। মানুষের জীবনে কত গল্পই তো থাকে, কত সুখস্মৃতি থাকে, থাকে পাওয়া না পাওয়ার অভিজ্ঞতা কিংবা হারিয়ে ফেলার তিক্ততা কিংবা থাকে সফলতার হাজারো গল্প, যা হয়তো অনায়াসেই, অন্য কাউকে অনুপ্রাণিত করে ফেলে মুহূর্তেই। এই গল্পগুলো হয়তো অজানাই থেকে যায়, আমরা আসলে কান পেতে থাকি, এই গল্পগুলো শোনার জন্য। এইজন্য বাংলা ব্লগ আয়োজন করেছে, জীবনের গল্প। যেখানে অতিথি তার নিজের জীবনের গল্প অন্যদের সামনে অনায়াসেই বলে ফেলবে এবং অতিথি নিজের থেকেও বেশ হালকা হবে, সেটা হয়তো মনের দিক থেকে।
আজকের অতিথিঃ @bristychaki
ভেরিফাইড সদস্য, আমার বাংলা ব্লগ
ফেলে আসা জীবন থেকে স্মৃতিচারণ।
দেখুন আমি একদম গ্রামের মেয়ে, ছোটবেলাটা গ্রামেই কেটেছে। বুঝে ওঠার আগেই বিয়েটাও হয়েছে। আমার কাকিমার সঙ্গে আমার বরের বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। যেহেতু আমার বর দেখতে শুনতে ভাল ছিল, তাই প্রায়ই আমার বর ওদের বাড়িতে যাতায়াত করত। কেননা আমার কাকা ও আমার বর দুজনেই পুলিশে চাকরি করতেন। এজন্যই আমার কাকিমা আমার বরকে খুব পছন্দ করতেন এবং বলতেন তোমাকে আমার জামাই বানাবো। যেহেতু আমাদের হিন্দু ধর্মের ভিতরে, নিজের রক্তের ভিতরে তেমন বিয়ে হয় না, তাই আমার বরের অন্যত্র যে বোনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, তার সঙ্গে একটা সময় গিয়ে কোন অবস্থাতেই বিয়ে হয় না।
এদিকে যেহেতু আমাদের বাড়িতে আমার বর যাতায়াত করতেন, তাই একটা সময়ের পরে গিয়ে আমার সঙ্গেই তার বিয়ে ঠিক করা হয়। তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম, সবেমাত্র নাইনে পড়ি। সংসার, বিবাহ পরবর্তী জীবন এসব কিছুই বুঝিনা। তাছাড়া আমার শ্বশুরবাড়ির অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না।
অবশেষে আমার গন্তব্য হয় ঢাকায়। সে সময় আমার বরের বেতন খুব কম, তারপরেও আমরা সেই স্বল্প বেতনে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছিলাম ঢাকা শহরে। যেহেতু আমি সর্বদা চুপচাপ থাকতাম এবং নিজের কোন কিছু কারো সঙ্গে তেমন শেয়ার করতাম না, তাই আমার পরিবারের লোকজন ভাবতো আমি ভালোই আছি।
তবে দিন গড়িয়ে যাওয়ার পরে ক্রমান্বয়ে আমার উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার শুরু হয়, যা আমি কাউকেই কোনোভাবে বোঝাতে পারতাম না। আসলে আমার বর চাইতো তার মতো করে আমাকে রাখতে, আর মানুষের কথা সে খুব শুনত। আর মানুষের কথা শুনেই আমার উপরে এই অত্যাচার গুলো হতো ।
যদিও আমি শুরুর দিকে তেমন প্রতিবাদ করিনি, তবে একটা সময় পরে আমি মানসিক চাপে পড়ে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে যাই, সে আমার সব রকম খোঁজ খবর রাখতো, তবে যেহেতু দূরে থাকতো তাই মানুষের কথা শুনে আমার সঙ্গে নানা রকম চাপ সৃষ্টি করতো।
কিছুদিন আগে একবার বাড়িতে গিয়েছিলাম সেখানে গিয়ে আমার এক বাল্য বন্ধুর সঙ্গে ছবি তুলেছিলাম, সেটা নিয়ে লংকা কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছিল। মানে অনেক তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সে অনেক মানসিক অত্যাচার করতো। আমার পুরো বাড়িতে জানিয়েছিল, আমার অবশ্য ভাবীরা বেশ সহযোগিতা করেছিল, তবে সে অনেকটা একরোখা স্বভাবের মানুষ।
একবার আমাদের আত্মীয়ের ভিতরের ছোট ভাই আমার বাসায় এসেছিল দেখে, সে ভিন্ন রকম অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে ফেলেছিল । এরকম হাজারো ঘটনা আছে। আমি তো অনেক বার কষ্টে সুসাইড করার মতো অবস্থায় গিয়ে ছিলাম। শুধু দুটো মেয়ের কথা ভেবে কিছু করতে পারিনি।
এই যে শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ, তারপরেও সংসারটাকে টিকিয়ে রেখেছি, এখানে যে আমি ঠিক মত কাজ করতে পারিনা, তা শুধুমাত্র ওর কারণেই। যাইহোক এখন অবশ্য সব মিলে সবকিছু ঠিকঠাক আছে, দোয়া করবেন আমাদের জন্য, যেন আমাদের সংসারটা ঠিক থাকে এবং আমি যেন পুরোদমে কাজে ফিরতে পারি।
আর একটা কথা সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, যাদের বাড়িতে মেয়ে আছে তাদের যখন অন্যত্র বিয়ে দেবেন, তখন একটু পারতপক্ষে চেষ্টা করবেন মেয়ের খোঁজখবর গভীরভাবে জানার জন্য।
অতিথি ও উপস্থিত দর্শকদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ।
পুরস্কার বিতরণের সম্পূর্ণ অবদান @rme দাদার
উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা বেশ ভালই উপভোগ করেছিল অতিথির জীবনের গল্প। তারা বেশ ভালই প্রশ্ন রেখেছিল এবং উত্তরগুলো খুঁজেও পেয়েছিল, অতিথির গল্পের মাঝে।
সব মিলিয়ে জীবনের গল্প চলছে, একদম দুর্বার গতিতে । পরবর্তীতে আমরা আসছি কিন্তু আপনার দরজায়, আপনি প্রস্তুত তো।
ধন্যবাদ
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

VOTE @bangla.witness as witness

OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
জীবনের গল্প শুনতে অনেক ভালো লাগে। এবার ব্যস্ততার কারণে রবিবারের আড্ডায় যুক্ত থাকতে পারিনি। ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। অতিথি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম।
মানুষের জীবনের গল্প আমাদের অনেকরকম ধারণা দেয়।জীবনের গল্পগুলো ভালো ও খারাপের সমন্বয়ে গঠিত।তেমনি এই জীবনের গল্পটি খুবই হৃদয়বিদারক ছিল, যেটা শোনার পর খুবই খারাপ লাগছিলো মন থেকে।তবে আড্ডাটা বেশ ভালো হয়েছিল, ধন্যবাদ ভাইয়া।
আসলে মানুষকে দেখে বুঝা যায় না, কার ভিতরে কতটা কষ্ট লুকিয়ে আছে। বৃষ্টি চাকী আপুর কথাগুলো শুনে সত্যিই খুব খারাপ লেগেছিল। উনি এতোটা মানসিক চাপের মধ্যে থাকে কিভাবে, সেটাই তো ভেবে পাই না। যাইহোক উনার ধৈর্য্য আরও বৃদ্ধি পাক,সেই কামনা করছি। এই পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।