আমার বাংলা ব্লগ এর প্রিয় বন্ধুগণ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

আজকে আমি হাজির হলাম কন্টেস্ট পোস্ট নিয়ে। আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে আমরা বাংলা ব্লগে একটি কন্টেস্ট চলমান রয়েছে। যার নাম হল ইউনিক চপ রেসিপি তৈরি। আসলে প্রতিবারের ন্যায় এবারও চেয়েছি ইউনিক কিছুই আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে। কারণ সচরাচর যেই চপ গুলো আমরা খেয়ে থাকি সেগুলো উপস্থাপন করলে হয়তো বা একদম বেমানান হবে। কারণ প্রতিযোগিতা মানে ভিন্ন কিছু উপস্থাপন করা। তাছাড়া আমরা সকলেই চাই সকলের মাঝ থেকে ভিন্ন ধরনের কিছু প্রতিযোগিতায় উপস্থাপন করা হোক। তবেই এর আসল মজা উপভোগ করা যায়। সত্যি বলতে ইতোমধ্যেই অনেক প্রতিযোগী দারুন দারুন কিছু চপের রেসিপি তৈরি করেছে। যদিও তাদের এই দারুন রেসিপি এর মধ্যে আমার আজকের এই রেসিপিটা একদম সামান্যই। তবুও নিজের চেষ্টা চালিয়ে গেলাম।


সত্যি বলতে কিছুটা হতাশা নিয়েই আমি রেসিপিটা তৈরি করেছিলাম। কারণ আমি ভিন্ন একটা রেসিপি তৈরি করতে চেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত আমি পর্যাপ্ত উপকরণ পাইনি সেজন্যই সে রেসিপিটা স্কিপ করলাম। প্রথমতই যখন চপের রেসিপি দেখেছি তখন সাথে সাথেই আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম আমি কি তৈরি করব। সেই কনসেপ্ট ছিল কাঁকরোল আর কাঁকড়া দিয়ে চপ তৈরি করার। যেহেতু সচরাচর কাঁকড়া খাওয়া হয় না, কিন্তু মাঝেমধ্যে হয়তোবা খাওয়া হয়। যদিও লাস্ট বার আমি যখন পটল আর কাঁকড়ার চপ তৈরি করেছিলাম তখন খেয়েছিলাম।


যাইহোক যেহেতু কাঁকরোল আর কাঁকড়া দিয়ে চপ তৈরি করার কথা সেই হিসেবে আমি পরদিন থেকেই কাঁকড়ার খোঁজ লাগানো শুরু করি। আমার হাজব্যান্ড পরদিন থেকেই আমাদের স্থানীয় বাজারে গিয়েছিল কাঁকড়া খোঁজার জন্য। কিন্তু সেদিন আর পায়নি। তারপর দিন গিয়েছিলে ব্যাকেরবাজার সেদিনও সেখানে দেখেছিল, সেখানেও পাওয়া যায়নি। বাড়ি ফেরার সময় আবার বাজারে দেখেছে তাও পায়নি। তারপর দিন আমাদের আরো কয়েকটা বাজার সেবারহাট, বসুরহাট আরো দুইটা স্থানীয় বাজারগুলোতেও কাঁকড়ার খোঁজ করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও এই কাঁকড়া পাওয়া যায় নি।যেখানেই গিয়েছে তখন বলছে এখন নাকি কাঁকড়ার সিজন নয়। এই কাঁকড়া পাওয়া যাবে অমাবস্যার সময়। হাতে সময় ছিল শুধু মঙ্গলবার। যেহেতু কাঁকড়াও পাওয়া যায়নি সেই হিসেবে কাঁকড়ার চপ তৈরি করার চিন্তা বাদ দিলাম।

তারপর ফ্রিজে টাকচাঁদা মাছ ছিল। পাশেই একটা গাছে ছিল অনেকগুলো ডুমুর। তাই ভাবলাম কাঁকরোলের ভেতরে টাকচাঁদা, ডুমুর আর নারকেলের মিশ্রিত পুর দিয়ে একটা চপ রেডি করে ফেলি। যাই হোক আপনারা রেসিপির মাধ্যমে পুরো চপের প্রসেসিং দেখতে পাবেন।তবে এটা কি কখনো ভেবেছেন গাছে যদি চপ ধরতো তাহলে কষ্ট করে আর বানিয়ে খাওয়া লাগতো না, হাহাহা।যেহেতু গাছে চপ ধরে না তাই আমি কৃত্রিম ভাবে চপ গাছ তৈরি করে নিলাম। যার যার ইচ্ছে হবে সে গাছ থেকে নিয়ে খেতে পারেন🤪।


গাছের মধ্যে চপ ধরেছে যে খাবে সে নিতে পারে,আজকের জন্য চপ গাছ উন্মুক্ত। |
😋রেসিপির আউটপুট ভিডিও😋
টাকচাঁদা,ডুমুর আর নারকেলের পুরে কাঁকরোলের চপ। |

রেসিপিটি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ |
উপকরণ | পরিমাণ |
কাঁকরোল | ৬টি |
টাকচাঁদা মাছ | ২টি |
ডুমুর | ১ থোকা |
কোরানো নারকেল | আধা কাপ |
টমেটো কুচি | ১ টি |
পেঁয়াজ কুচি | ১ টি |
কাঁচামরিচ কুচি | ২ টি |
লবণ | পরিমাণ মত |
রসুন বাটা | ২ টেবিল চামচ |
মরিচ গুড়ো | ২ চা চামচ |
জিরা গুড়ো | ১ চা চামচ |
হলুদ গুড়ো | ১ চা চামচ |
আটা | আধা কাপ |
বিস্কুটের গুড়ো | ২ কাপ |
সয়াবিন তেল | পরিমাণ মত |

প্রথমেই টাকচাঁদা মাছগুলো কেটে নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিলাম।এর থেকে লেজের সাইডের পিস গুলো নিলাম।একটি পাতিলে পরিমাণ মত পানি দিয়ে এরমধ্যে মাছ এবং সামান্য হলুদ গুড়ো দিয়ে ভালোভাবে সিদ্ধ করলাম।

মাছ সিদ্ধ হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে পানি ঝরিয়ে আলাদা বাটিতে মাছের পিসগুলো তুলে নিলাম।ঠান্ডা হওয়ার পর আমি এগুলো থেকে কাটা ছাড়িয়ে নিলাম।ভালোভাবে সবগুলো কাটা বেছে নিতে হবে নাহলে গলায় বিঁধবে।
এখন কাঁকরোল গুলো নিলাম।কাঁকরোল এর মুখের সরু দিকটা সমানভাবে একটু করে কেটে নিলাম।তারপর ছুরির সাহায্যে কাঁকরোল এর ভিতরের সব অংশ কেটে বের করে নিতে থাকলাম।তবে সাবধানে সবকিছু বের করলাম যাতে এটি ভেঙে না যায়। এভাবে ৬টি কাঁকরোল এর ভিতরের সব অংশ বের করে নিয়েছি।
এই ধাপে একটি কড়াই চুলায় বসিয়ে দিলাম।২ টেবিল চামচ পরিমাণ তেল দিয়ে দিলাম।গরম হলে এরমধ্যে পেঁয়াজ কুচি,কাঁচামরিচ কুচি দিয়ে ভাজতে থাকলাম।তারপর টমেটোকুচি দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ভেজে নিলাম।সাথে কিছু ডুমুর কেটে রেখেছিলাম সেগুলোও দিয়ে দিলাম।
এখন সেই ভাজার মধ্যে বাকি মসলা উপকরণ মানে লবণ,হলুদ গুড়া,মরিচ গুড়া, সামান্য জিরা গুড়া দিলাম।তারপর ভালোভাবে নেড়েচেড়ে ঝুরা মাছ দিয়ে দিলাম।কিছুক্ষণ ভেজে নিয়ে কোরানো নারকেল দিয়ে দিলাম।এখন প্রায় ৫-৬ মিনিট একটু পানি যোগে ভেজে শুকনো করে তুলে বাটিতে নিয়ে নিলাম।
এখন সেই কাঁকরোল গুলো ভালোভাবে একবার ধুয়ে নিলাম।এই পুর কিছুটা ঠান্ডা হয়ে এলে কাঁকরোল এর ভিতরের খালি অংশে দিতে থাকলাম।ভালোভাবে দিয়ে সবগুলো পূর্ণ করে নিলাম।

এই ধাপে কাঁকরোল এর মুখের কাটা অংশ নিয়ে টুথপিক দিয়ে আটকে দিলাম যাতে খুলে না যায়।এক এক করে সবগুলো এভাবে করে নিলাম।

আধা কাপ পরিমাণ আটার মধ্যে সামান্য পানি যোগ করে পাতলা ব্যাটার তৈরি করলাম।আর টোস্ট বিস্কুট শিল পাটায় বেটে গুড়ো করে নিলাম।
এখানে আটার ব্যাটারের মধ্যে প্রথমত একটি কাঁকরোল নিয়ে ডুবিয়ে নিলাম। তারপর সেটিকে বিস্কুটের গুড়োর মধ্যে নিয়ে সবকিছু ভালোভাবে লাগিয়ে নিলাম। এভাবে আমি এক এক করে সবগুলো কাঁকরোল বিস্কুটের গুঁড়ো দিয়ে কোটিং করে নিয়েছি। অবশ্য প্রায় দুই ঘন্টার মত এগুলো সেট হওয়ার জন্য ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলাম।
এই ধাপে একটি ফ্রাইপ্যান চুলায় বসিয়ে দিলাম। তারপর এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ সয়াবিন তেল দিলাম এবং গরম হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলাম। তেল গরম হয়ে এলে এক এক করে কাঁকরোল গুলো দিতে থাকলাম। অবশ্য আমি কাঁকরোলের লতা রেখে দিয়েছিলাম যাতে সুবিধামতো ভেজে নেয়া যায়। এভাবেই প্রথম ধাপে চারটি তারপরের ধাপে দুটি করে আমি সবগুলো কাঁকরোল ভালো মতো ভেজে নিয়েছি।
মিডিয়াম লো আঁচে এই কাঁঠালগুলো প্রায় দশ মিনিটের মত ভেজে নিলাম যাতে ভালোভাবে ভিতরের অংশ ভাজা হয়ে যায়। এই সবগুলো চপ ভাজা হয়ে গেলে তেল ঝরিয়ে নামিয়ে নিলাম।








প্রথমে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানাচ্ছি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য। টাকচাঁদা, ডুমুর আর নারিকেলের পুরে কাঁকরোলের চপ রেসিপি দেখে জিভে জল চলে আসলো। এরকম মজাদার রেসিপিগুলো আমি যত দেখি আমার কাছে ততই ভালো লাগে। আসলে আপনি যে ফটোগ্রাফি করেছেন শেষে সেগুলো দেখে আমি তো একেবারে মুগ্ধ। বেশ ইউনিক ছিল আপনার রেসিপি। অসম্ভব ভালো লেগেছে সম্পূর্ণটা দেখে।
চমৎকার ও সাবলীল মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সর্বদায়।
সত্যি খুবই ইউনিক একটি রেসিপি শেয়ার করেছেন আপু। রেসিপিটির নাম শুনে প্রথমে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। রেসিপিটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা খেতে খুবই সুস্বাদু হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য এবং কনটেস্টে অংশগ্রহণ করার জন্য।
চমৎকার ও সাবলীল মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপু ভালো থাকবেন সর্বদায়।
নারিকেল দিয়ে এবং কাঁকরোল দিয়ে দারুন একটি রেসিপি তৈরি করেছেন। রমজান মাস আসলেই বিভিন্ন রকমের খাবার খেতে ইচ্ছে করে। বিশেষ করে তেলেভাজা এই খাবারগুলো খেতে অনেক ভালো লাগে। আমি অবশ্যই একদিন চেষ্টা করব এভাবে মজার এই রেসিপি তৈরি করে খাওয়ার জন্য। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু মজার এই রেসিপি শেয়ার করার জন্য।
ঠক আছে আপু অবশ্যই একদিন চেষ্টা করবেন এভাবে মজার এই রেসিপি তৈরি করে খাওয়ার জন্য।
আপু আপনার শেয়ার করা রেসিপি দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন দেখে ভালো লাগলো। এই ধরনের রেসিপি গুলো কখনো তৈরি করা হয়নি। একদিন অবশ্যই বাসায় চেষ্টা করব তৈরি করতে। ইউনিক একটি রেসিপি তৈরি করে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
জি আপু একদিন অবশ্যই বাসায় চেষ্টা করবেন তৈরি করতে।
প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি ইউনিক চপ রেসিপি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য। খুবই ইউনিক একটি রেসিপি শেয়ার করেছেন আপু। টাকচাঁদা,ডুমুর আর নারকেলের পুরে কাঁকরোলের চপ দেখে তো জিভে পানি চলে এলো আপু। দেখেই বুঝা যাচ্ছে খেতে ইয়াম্মি হয়েছে। রেসিপিটা তৈরি করতে নিশ্চয়ই অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। যাইহোক পরিশ্রমের ফল অবশ্যই মিষ্টি হবে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
জি ভাইয়া খেতে ইয়াম্মি হয়েছে আর তৈরি করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে।
রেসিপিটি দেখতে যেমন ইউনিক খেতেও কিন্তু খুব সুস্বাদু হয়েছিল। অনেক ধন্যবাদ ইউনিক একটি রেসিপি বানিয়ে খাওয়ানোর জন্য। আর হ্যাঁ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ।
একদম ঠিক রেসিপিটি দেখতে যেমন ইউনিক খেতেও কিন্তু খুব সুস্বাদু হয়েছিল।ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য।
চমৎকার ও সাবলীল ভাষায় ফিডব্যাক দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
Thank you, friend!


I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
সব সময় সাপোর্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আশা করছি এভাবেই সাপোর্ট করে যাবেন।
গাছে ধরেছে মজার চপ||টাকচাঁদা,ডুমুর আর নারকেলের পুরে কাঁকরোলের চপ নাম শুনেই তো জিভে পানি চলে এসেছে। চমৎকার মিলেয়েছেন টাইটেল। ইউনিক ইউনিক আইডিয়া গুলো দেখলে ভীষণ ভালো লাগে। আপনার রেসিপি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সত্যি আপনি প্রশংসার দাবিদার। অভিনন্দন আপনাকে আপু। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল ভালো থাকবেন।
আমারও ইউনিক ইউনিক আইডিয়া গুলো দেখলে ভীষণ ভালো লাগে।ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য।
https://twitter.com/bristy110/status/1638507510327037952?s=20
আপু প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে। আপনি নারিকেল,মাছ আর কাঁকরোল দিয়ে মজার চপ রেসিপি শেয়ার করেছেন। দেখে বেশ লোভনীয় লাগছে। আপনার উপস্থাপনা খুব সুন্দর হয়েছে। শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।
আসলেই বেশ লোভনীয় ছিলো আপু।ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য।