মাটির মা টক শো-তে আমার অভিজ্ঞতা

in আমার বাংলা ব্লগlast month

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


Messenger_creation_277CFF63-D603-496D-A54C-C8C71790000A.jpeg







আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



গত সোমবার মাটির মা ফাউন্ডেশনের আয়োজিত এক মননশীল টক শো-তে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম। সমাজ, সংস্কৃতি, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনার সাথে কবিতা পাঠ। অতিথি হিসেবে নিজেকে দেখার অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা। এই লেখায় সেই দিনের অভিজ্ঞতা, আমার বক্তব্যের সারাংশ, আর পরবর্তী প্রতিক্রিয়াগুলো নিয়ে কিছু ভাবনার কথা বলতে চাই।

টক শোয়ের বিষয়বস্তু আগে থেকে নির্ধারিত ছিল না। শুরুতেই টুকুটাক আলোচনা ও কবিতা অয়াঠের পর হঠাৎই সঞ্চালক আমায় বললেন —নতুন প্রজন্মের হাত ধরে সাহিত্য ও সংস্কৃতি কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে, এবং প্রযুক্তির বর্তমান প্রভাব আমাদের মানস গঠনে কী ভূমিকা রাখছে, প্রজন্মকে সুস্থ মানসিকতা দিতে হলে সংস্কৃতির ভূমিকা কি এই বিষয়ে কিছু বলতে। বিষয়টি শুনেই আমি বুঝতে পারছিলাম, এটা কেবল একটা আলোচনার প্ল্যাটফর্ম নয়—এ এক দায়ভার। আমরা যারা সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে ভাবি, লিখি, বা সক্রিয়ভাবে অংশ নিই, আমাদের পক্ষে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা জরুরি।

আমার আলোচনার শুরুটা করেছিলাম প্রযুক্তির প্রসঙ্গ দিয়ে। কারণ, আজকের পৃথিবীকে বোঝার জন্য প্রযুক্তিকে উপেক্ষা করার উপায় নেই। আমি বলেছি, প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে আমাদের সময়কে দ্রুততর করেছে, জ্ঞানের প্রাপ্তিকে সহজ করেছে, তথ্য পৌঁছে দিচ্ছে হাতের মুঠোয়। কিন্তু এই প্রযুক্তিই যদি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে, তাহলে সেটি হয়ে ওঠে এক নীরব শৃঙ্খল।

নতুন প্রজন্ম—ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে তরুণ লেখক, নির্মাতা, ও চিন্তকরা—এই প্রযুক্তির মধ্যে বড় হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া, অ্যালগোরিদম, স্ক্রিন টাইম—এসব একদিকে যেমন সুযোগ এনে দিয়েছে, অন্যদিকে চিন্তা করার ক্ষমতা, মনঃসংযোগ, ও ধৈর্যকে হ্রাস করছে। আমি সেদিন বলেছিলাম—প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে, তাকে কর্তৃত্ব দিতে নয়। আমরা যেন মোবাইল চালাই, মোবাইল যেন আমাদের না চালায়।

এরপর আমি বলেছি বই পড়ার গুরুত্ব নিয়ে। আমি অনুভব করি, নতুন প্রজন্মের একটা বড় অংশ এখন আর বই পড়ে না। তারা ভিডিও দেখে, ক্লিপ দেখে, বা এক্সপ্রেস ইনফরমেশন চায়। অথচ বই আমাদের ধীরে ভাবতে শেখায়। শব্দের গভীরতায় ডুবে যেতে শেখায়। সাহিত্য শুধু কাহিনি নয়, তা মনন গঠনের এক প্রশিক্ষণ।

আমি বলেছিলাম, বই পড়া মানেই কেবল তথ্য সংগ্রহ নয়—এটা সহানুভূতির চর্চা, কল্পনার প্রসার, এবং আত্মোপলব্ধির এক আকর। যখন একজন তরুণ কোন গল্পে প্রবেশ করে, সে নিজের সীমানার বাইরে গিয়ে নতুন পৃথিবী আবিষ্কার করে। বইয়ের চরিত্র, দ্বন্দ্ব, ভাষা ও সময় তাকে আরও মানবিক করে তোলে।

আমার বক্তব্যে উদাহরণ দিয়েছি—কিভাবে কোনো একটা কবিতা আমাদের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মনোসংযোগ করিয়ে দেয়, বা কোনো উপন্যাস আমাদের চোখে এনে দেয় এমন কিছু ছবি যা বাস্তবে কখনো দেখিনি। এই অভিজ্ঞতাগুলো প্রযুক্তি কখনো দিতে পারে না।

সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভূমিকার উপর। আমি বলেছি, সাহিত্য আর সংস্কৃতি নিছক বিনোদনের উপাদান নয়। এরা সমাজের বিবেক। তারা আমাদের শেখায় কীভাবে ভালো মানুষ হতে হয়, অন্যকে সম্মান করতে হয়, এবং নিজের চিন্তা দিয়ে জগতকে বিচার করতে হয়।

একটা জাতির উন্নয়ন কেবল প্রযুক্তি বা অর্থনীতির মানদণ্ডে বিচার করলে ভুল হবে। তার সাহিত্য, সংগীত, নাটক, নৃত্য, লোককথা, ভাষার গতিময়তা—এসবই বলে দেয় জাতিটি কতোটা উন্নত। আমি বলেছি, নতুন প্রজন্মকে সেই দৃষ্টিভঙ্গি দিতে হবে, যে তারা নিজেদের জীবনে শিল্প ও সংস্কৃতিকে জায়গা করে দিতে পারে।

সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, অনুষ্ঠানের পর সঞ্চালক নিজে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বলেছেন, আমার বক্তব্য শ্রোতাদের মধ্যে দারুণ প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই অনুষ্ঠান শেষে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে বার্তা পাঠিয়েছেন, কেউ কেউ বইয়ের পরামর্শ চেয়েছেন, আবার কেউ নিজের লেখালেখি শেয়ার করতে চেয়েছেন। আমি সত্যিই আপ্লুত।

এই প্রতিক্রিয়াগুলোই প্রমাণ করে দেয়, মানুষ এখনো ভাবতে চায়, জানতে চায়, এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির মধ্যে ডুবে যেতে চায়—শুধু তাদের ডাকা দরকার, জাগিয়ে তোলার দরকার।

এই অভিজ্ঞতা আমার কাছে কেবল একটি আলোচনায় অংশ নেওয়া নয়। এটি ছিল এক আত্মবিশ্বাসের পুনর্জন্ম। আমি বুঝেছি, এখনও এমন শ্রোতা আছে যারা মন দিয়ে শোনেন, এমন প্রজন্ম আছে যারা বই পড়তে চায়, এবং এমন মানুষ আছে যারা সমাজ নিয়ে ভাবে।

সাহিত্য-সংস্কৃতির পথচলা সহজ নয়। সেখানে লাভ নেই, তাৎক্ষণিক সাফল্য নেই, কিন্তু রয়েছে অন্তরের তৃপ্তি, আর দীর্ঘমেয়াদি সমাজ গঠনের সম্ভাবনা। আমি বিশ্বাস করি, এই অভিজ্ঞতা আমাকে আরও দায়বদ্ধ করল। ভবিষ্যতেও আমি এই আলোচনার অংশ হতে চাই, তরুণ প্রজন্মের পাশে দাঁড়াতে চাই, এবং সাহিত্যের ভাষায় সমাজকে জাগিয়ে তুলতে চাই।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণজেনারেল রাইটিং
কলমওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNq11oNEiVHeYi1dFPZdD9DtfDnLSeGtLw3tXF7pNDf1KxPvxfffo2xboPm7wR8jPkKYie3LXrW.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iQSBbshXsaBma59uahG3EZgK1iDXVoywUGGxx1xjvsB7gc2x2aoAvMJQKdwPc9f7Bh4cuj9tdr6.png

1000205505.png