অন্বেষা পত্রিকা প্রদত্ত A Lit সম্মাননা ২০২৪ গ্রহণের অভিজ্ঞতা
অন্বেষা পত্রিকার A Lit সম্মাননা ২০২৪ গ্রহণ
কয়েকদিন আগে কবিতার জন্য পেলাম আরও একটি স্বীকৃতি। আজ সেই অনুভূতি আপনাদের সবার সাথে ভাগ করে নেব ঠিক করলাম। কবিতা আমায় অনেক কিছু দিয়েছে। যেদিন প্রথম কবিতা লিখতে এসেছিলাম, সেদিন ভাবিনি কবিতাকে বুকে নিয়ে কখনো এতোকিছু পাব। কিন্তু ধীরে ধীরে কবিতা ফিরিয়ে দিয়েছে অনেক।
সম্প্রতি অন্বেষা পত্রিকা আমাকে A Lit সম্মান প্রদান করলো। কবিতার জন্য প্রদত্ত এটি একটি সম্মান। এই পত্রিকায় লিখে আসছি অনেক দিন ধরে। এবছর তাদের সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে আমার একটি কবিতা। তারপরেই পত্রিকার তরফে একটি ইমেইল পাই। সেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল, তাঁরা আমাকে পত্রিকার প্রদত্ত সম্মানে ভূষিত করতে চায়। আসলে পত্রিকাটি এই বছর দশম বর্ষে পা দিল। আর একটি লিটল ম্যাগাজিন এর কাছে দশটি বছর পথ হাটার অর্থ অনেক বড়। এখানে ১০ বছরে একটি পত্রিকা অনেক পরিণত জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে অন্বেষা বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা। আর সেই উপলক্ষেই এরা বড় পরিসরে আয়োজন করেছিল তাঁদের সংখ্যা প্রকাশ এবং সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। পশ্চিমবঙ্গের বুকে এদের কর্মকাণ্ডও সুবিস্তৃত। বই প্রকাশ থেকে শুরু করে নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশ এবং প্রকাশনার কাজ এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। সেই অন্বেষা পত্রিকা যখন আমাকে সম্মাননা প্রদান করবে বলে জানলাম তখন নিজের মধ্যেই এক পরম আনন্দ দানা বাঁধলো। কলমের অবদানের জন্য কোথাও থেকে কোন সম্মাননা পেলে তা আমার জীবনে রাখা থাকে একেবারে আলাদা পংক্তিতে। এর আগেও বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছি, কিন্তু অন্বেষা পত্রিকার সম্মান আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই পত্রিকাটি বর্তমানে লিটিল ম্যাগাজিন দুনিয়ায় একটি পরিচিত নাম।
![]() | ![]() |
---|
পত্রিকার তরফে ইমেইল পাওয়ার পর আমি তাদের সম্মতি প্রদান করি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবো বলে। তারপর তারা আমাকে আমন্ত্রণের চিঠি প্রেরণ করে। সেইদিন যথা সময়ে আমি পৌঁছে যাই তাঁদের অনুষ্ঠানে। তাঁরা অনুষ্ঠানের জন্য যে স্থান স্থির করেছিল তাও আমার কাছে ছিল এক অনন্যপ্রাপ্তি। জায়গাটি হল উত্তর কলকাতার বুকে অবস্থিত শিমলা স্ট্রিটে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি। সেই ঐতিহ্যবাহী বাড়িতে আমি এইবার প্রথম প্রবেশ করলাম। সেখানে ঢুকে এক অদ্ভুত প্রশান্তি ভর করেছিল আমায়। আনাচে কানাচে যেন স্বামীজীর ঘ্রাণ। জন্ম থেকে সেই বাড়িতেই তাঁর বেড়ে ওঠা। আর আমি সেই বাড়িতেই তাঁর চরণ স্পর্শ করে উপস্থিত হলাম পুরস্কার নেওয়ার মঞ্চে। কবিতার অনুষ্ঠান হলেও সে এক ঝলমলে মঞ্চ। প্রচুর কবি এবং সাহিত্যিকদের উপস্থিতি মঞ্চটিকে আলোকিত করে রেখেছিল। সেখানেই কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্বেষা পত্রিকার সম্পাদক আমার হাতে তুলে দিলেন A Lit সম্মাননা পদক। সাথে দিলেন একটি পোড়ামাটির সুদৃশ্য মূর্তি। এবং সর্বোপরি হাতে তুলে দিলেন তাঁদের সদ্য প্রকাশিত পত্রিকার সংখ্যাটি।
মঞ্চ থেকে নেমে পাতা উল্টে দেখলাম সেখানে যত্ন করে তাঁরা স্থান দিয়েছেন আমার কবিতাটিকে। আজও নিজের অক্ষর সবার আকারে দেখলে এক পরম ভালোলাগা কাজ করে মনে। পত্রিকায় তার সঙ্গে রয়েছে আরও বিশিষ্ট কবিদের কবিতা এবং গল্প। রয়েছে কিছু মূল্যবান প্রবন্ধও৷ সবকিছু মিলে অন্বেষা কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করল একটি অসাধারণ পত্রিকা সংখ্যা।
বিবেকানন্দের পৈতৃক ভিটেতে নবনির্মিত এই প্রেক্ষাগৃহটি বেশ অত্যাধুনিক এবং সাজানো। কবিতা ও সাহিত্যের ডাকে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে আমি হাজির হলেও এই জায়গাটিতে এবার প্রথম গিয়ে পৌঁছালাম। চতুর্থ তলে অবস্থিত এই প্রেক্ষাগৃহটি আধুনিক শয্যায় সজ্জিত এবং পরিচ্ছন্নও বটে। তাই সবকিছু মিলে সেদিনের পুরস্কারপ্রাপ্তি এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতার জন্ম দিল। স্বামী বিবেকানন্দের বাড়িতে তাঁর স্মৃতিধন্য ও চরণধূলিস্পর্শে পবিত্র স্থানে পুরস্কারপ্রাপ্তি আমার জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতাটুকু বুকে নিয়ে আমি অনুষ্ঠানের পরে ফিরে এলাম বাড়িতে। কিন্তু রয়ে গেল সেই অসাধারণ মুহূর্তটি।
আজ আপনাদের সামনে নিয়ে এলাম সেইদিনের কিছু ছবি এবং ব্যাখ্যা করলাম আমার প্রাপ্ত অনন্য অভিজ্ঞতাটুকু। আমার সার্বিক পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে আশা রইল।
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
যারা গুণী মানুষ তারা সব সময় নিজেদের যোগ্য সম্মান পায়। আসলে প্রতিভা এবং গুণ মানুষকে সম্মান এনে দেয়। ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে সত্যি অনেক ভালো লাগলো। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানবেন। আপনার মন্তব্য আমায় অনুপ্রাণিত করল। কবিতা আমার কাছে এক চলমান ধারা। প্রতিটি মানুষের বক্তব্যও যেন এক একটি কবিতা। তাই আপনার এই প্রশংসাও আমার কাছে এক প্রিয় কবিতারই সমান।
একই পত্রিকায় একসাথে লেখার আনন্দটাই আলাদা। সেদিন উপস্থিত থাকতে পারলে এমন ছবি আমারও হত। তবে তোমাকে এভাবে দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে৷ দেওয়াল আলমারিগুলো এভাবেই ভরে যাক।
ঠিক তাই। একসাথে লিখলে আনন্দ হয়। আর তুই এলে তো কথাই ছিল না।। আনন্দ একেবারে কয়েক শ গুন বেড়ে যেত। অনেক ভালোবাসা রইল।
কোন কিছুতেই সম্মাননা পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এটার মধ্যে লুকিয়ে থাকে আবেগ, ভালবাসা এবং সম্মান। অনেক ভালো লাগলো আপনার এই পোস্টটি পড়ে। আপনার জীবনে আরও বড় বড় সম্মাননা আসুক এটাই কামনা করি।
অনেক ভালোবাসা সিয়াম৷ তোমার মন্তব্য ও শুভেচ্ছা পেয়ে ভীষণ ভালো লাগলো। খুব ভালো থেকো।