সুস্থথা হলো সৃষ্টিকর্তার নিয়ামত
আসসালামু আলাইকুম
ডাক্তার আমার কথা শোনার পর তিনি আমার নাক দেখা শুরু করলেন তখন আমি অবাক হয়ে যাই যে তিনি আমার নাক দেখছেন কেন সমস্যা তো আমার কানে কিন্তু ডাক্তার তখন আমাকে বুঝিয়ে দেয় যে নাক, কান ও গলার সংযোগ একসাথেই থাকে যার ফলে আমার কান ব্যথা করলেও সমস্যাটি আমার নাকের মধ্যে হতে পারে । তিনি মাত্র এক মিনিট পর্যবেক্ষণ করে বললেন যে আমার নাকের হার অতিরিক্ত বাঁকা যার ফলে আমার কান ব্যথা করে, আমি অবাক হয়ে যাই যে নাকের জন্য কান ব্যথা করবে কেন? কিন্তু এটাই বাস্তব ছিলো যে আমার সমস্যা নাকের মধ্যেই ছিল কিন্তু আমার নাক কখনো ব্যাথা করত না যার ফলে আমি আরও অবাক হয়ে যাই । ডাক্তার আমাকে ভালো করে বুঝিয়ে বললেন যে আমাকে নাকের অতিরিক্ত হাড় কেটে ফেলে দিতে হবে তারপর তিনি বললেন আমি যেন পরিবারের সাথে গিয়ে আলোচনা করি এবং তাদেরকে বলতে হবে ঔষধ দিয়ে কোনরকম কাজ হবে না আমাকে অপারেশনের পথ অবলম্বন করতে হবে । তো বাড়িতে আসার পর ডাক্তার আমাকে যেগুলো বলল আমি সেগুলো আমার পরিবারকে বুঝিয়ে বললাম এবং তারা বলল “আচ্ছা অপারেশন করতে হলে আরেকটু পরে করি আমরা আগে একটু বিষয়টা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখি” তখনই আমার হঠাৎ করে মনে হলো আমার একজন বন্ধুও এক বছর আগে নাকের অপারেশন করেছিল । তখন আমি তার কাছে গিয়ে জানতে পারলাম তার ঘনঘন হাঁচি পেত এবং সে যখন নাক চেকআপ এর জন্য গিয়েছিল তখন সে জানতে পারল তার নাকের হাড় এবং মাংসপেশি বৃদ্ধি পেয়েছে । ফলে তাকে নাকের অপারেশন করতে হয়েছে এবং অপারেশনের পরে আলহামদুলিল্লাহ সে এখন সুস্থ রয়েছে এবং সে আমাকে বর্ণনা করেছে নাকের অপারেশন আহামরি কিছু নয় । তারপর আরো ১০-১২ দিন কেটে গিয়েছে এবং আমার পরিবার থেকে আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে অপারেশন করানোর জন্য । তারপর আমি গিয়ে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলাম প্রয়োজনীয় মেডিকেল টেস্টগুলো কমপ্লিট করলাম এবং আমি অপারেশনের জন্য নির্বাচিত হলাম । তারপর আমাকে সাত দিনের সময় দেওয়া হলো এবং সাত দিনের প্রেসক্রিপশন দেওয়া হলো যেখানে অপারেশনের আগের ওষুধগুলো লেখা ছিল । অপারেশনের দিন অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, আমি একটু বেশি নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু এই বিষয়ে আমি কাউকে বলিনি কেননা আমার জন্য অপারেশন ফরজ হয়ে গিয়েছিল । অপারেশনের দিন আমার দুই বন্ধু এবং আমার বড় ভাই, আমার আম্মু ও আমার দুলাভাই আমাকে সাহায্য করার জন্য এসেছিল ।
অপারেশন সাধারণত রাত দশটা-এগারোটার পরে করা হয় কিন্তু ওই দিন ডাক্তারের বেশি রোগীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট না থাকায় আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং আমাকে চেতনা নাশক দ্বারা অজ্ঞান করা হয়েছিল । আমাকে অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে ৭:১০ মিনিটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং অপারেশন থিয়েটার থেকে আমাকে ৭:৪০ এর মধ্যে নেওয়া হয়েছিল অর্থাৎ মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে আমার অপারেশন সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল । অপারেশন শেষ হওয়ার পরেই আমার জ্ঞান ফিরে আসে এবং নিজের মধ্যে অনেক আনন্দ অনুভব হয় । অপারেশনের পর আমার নাকের মধ্যে অনেক বেশি করে ব্যান্ডেজ করা হয় যাতে করে আমার নাক থেকে রক্ত না বের হয় আর এই ব্যান্ডেজের কারণে আমি নাক দিয়ে শ্বাস নিতে পারছিলাম না যার ফলে আমাকে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হচ্ছিল । অপারেশনের তারিখে রাত ১১ টার পর থেকে আমার ভয়ংকর জ্বর এসেছিল কিন্তু সকালে আমার জ্বর সেড়ে উঠে । তবে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি যেটা বিরক্তিকর ছিলো সেটা হলো আমার নাকের ব্যান্ডেজ, ব্যান্ডেজ এর কারণে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তবে আমার ব্যান্ডেজ খোলার জন্য আমাকে আরও একদিন অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল । হাসপাতালের কাছেই আমার বোনের বাসা থাকায় হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ হওয়ার পরই আমি আমার বোনের বাসায় চলে যাই কেননা কোনো প্রকারের ঝাঁকুনি আমার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো । ঝাঁকুনি থেকে আমার নাক দিয়ে রক্ত পড়ার মতো সম্যসায় পড়তে হতো, বাড়িতে যাওয়ার পর আমি বিছানায় আরাম করার জন্য শুয়ে পড়ি আর নাকের অপারেশনের জন্য আমাকে সবসময় এক পজিশনে শুয়ে থাকতে হতো যেটা আমার কাছে খুব বেশি বিরক্তিকর ছিলো । আমার খাবার-দাবার এর মধ্যেও অনেক ধরনের সীমাবদ্ধতা করা হয়েছিল যেমন আমাকে শুধুমাত্র তরল খাবার খেতে হবে যেমন ফলের রস, পানি তবে ডাক্তার আমাকে বেশি বেশি আইসক্রিম খেতে বলেছিলো যাতে করে আমার মুখ দিয়ে ব্লিডিং না হয় । আমাকে অনেক ধরনের ঔষধ খেতে হতো যার ফলে আমি কখন ঘুমিয়ে পরতাম আমি নিজেও বলতে পারতাম না । অপারেশনের দুইদিন পর আমার নাকের ব্যান্ডেজ খোলার জন্য আমাকে আবার হাসপাতালে যেতে হয়, নাকের অনেক ভিতরে ব্যান্ডেজ দেওয়া ছিলো যাতে করে ব্লিডিং না হয় । ব্যান্ডেজ খোলার সময় আমাকে বলা হয় আমি যেন আমার হাত মুষ্টি বদ্ধ না করি, আমার কপাল ভাজ না করি এবং কোনো প্রকার শব্দ না করি কেননা আমি যদি এগুলো করি তাহলে আমার প্রচুর ব্লিডিং হবে । তারা যখন আমার নাকের এক পাশ থেকে ব্যান্ডেজ খোলা শুরু করছিলো তখন আমার সেগুলোকে সহ্য করতে হচ্ছিলো কোনোপ্রকার নড়াচড়া না করেই । ওই সময়টাতে আমি শুধু মনে মনে বলছিলাম এই রকম যেন আমার শত্রুর সাথেও না হয় । আমার নাকের ব্যান্ডেজ খোলারপর আমাকে আরো অল্প ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয় এবং এই ব্যান্ডেজ আমাকে কালকে খুলার জন্য বলা হয় । পরেরদিন আমি ব্যান্ডেজ খুলে আমি আমার বোনের বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে চলে আসি তবে আমার নাকের মধ্যে এখনো পাইপ লাগানো ছিলো নাকের হাড়ের সাপোর্ট হিসেবে । অপারেশনের ৭ দিন পর ডাক্তারের কাছে গিয়ে এই পাইপগুলোকে সরাতে হয়েছে এবং যেদিন আমি নাক থেকে পাইপ সরালাম সেদিন আমি নাক দিয়ে তাজা বাতাস অনুভব করছিলাম । তারপর থেকে নিজের যত্ন নেওয়া শুরু করলাম এবং আজকে আমি অনেকটাই সুস্থ রয়েছি আল্লাহর রহমতে তবে এখনো কিছুটা শুকানোর বাকি রয়েছে । আমার নাকের অপারেশনের পর আমি একটি জিনিস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছি আর সেটা হলো সুস্থথা হলো সৃষ্টিকর্তার নিয়ামত, আমাদের সকলেরই সৃষ্টিকর্তার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা উচিত ।
ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে । আজ এই পর্যন্তই, দেখা হবে নতুন কোনো পোস্টে ।
Twitter
Quotes :
Retweete & react :
Tweet comment :
Twitter Puss promote : https://x.com/BokhtiarMr90788/status/1920109187687682077?t=vI1KGA6cPxFsIHh-7-L0MA&s=19
Coin market cap Comment : https://coinmarketcap.com/community/post/358450584
Pussfi boost :