"শ্বশুরমশাইকে নিয়ে এন্ডোস্কোপি করাতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
এন্ডোস্কোপি কথাটা বহুবার শুনেছি কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে নিজের এটি করার অভিজ্ঞতা নেই। এমনকি আমার খুব পরিচিত কারোর এন্ডোস্কোপি হয়েছে বলেও শুনি নি কখনো। আমার বিয়ের পর শুনেছিলাম আমার ননদের হাজবেন্ডের দুবার এন্ডোস্কোপি হয়েছে এবং এটা যথেষ্ট কষ্টকর বলেই তিনি জানিয়েছিলেন।
![]()
|
---|
তাই শ্বশুরমশাইকে নিয়ে যথেষ্ট ভয়েছিলাম। কারণ গতকাল ওনার এন্ডোস্কোপি করার ডেট ছিলো। সেই মতো খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সাড়ে ছটার মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম এইমসের উদ্দেশ্যে। শুভ যেহেতু মাঝে প্রায় এক মাস ছুটি করেছে, তাই ও আর কাল ছুটি করতে পারেনি। তাই আমার আর শ্বশুর মশাইয়ের সাথে গিয়েছিল আমার ননদের হাজব্যান্ড।
![]()
|
---|
যেহেতু এদিন ভর্তির থাকার কোনো ব্যাপার ছিল না, তাই আমরা একেবারে গাড়ি ঠিক করে নিয়ে গিয়েছিলাম, যাতে এন্ডোস্কোপি হয়ে যাওয়ার পর আমরা ওই গাড়িতে করেই বাড়িতে ফিরতে পারি।
এইমসে এই নিয়ে অনেকবার যাওয়া হয়েছে। মাঝখানে থেকে যেতেও অনেকগুলো দিন। কিন্তু তৎসত্ত্বেও এখনো যেন সম্পূর্ণ জায়গাটা চিনে উঠতে পারিনি, এতটাই বিস্তৃত এলাকা এইমসের। সমস্ত ডিপার্টমেন্টের আলাদা আলাদা সেক্টর রয়েছে, যেগুলো খুঁজে পেতে সাধারণ মানুষের যথেষ্ট কষ্ট করতে হয়। আমরাও সেই দলভুক্তই হয়েছিলাম গতকাল। অবশ্য আমাদের কাছে যে পেপারটা ছিলো, তাতে এন্ডোস্কোপি স্যুট পর্যন্ত পৌঁছানোর ডিটেইলস দেওয়া ছিলো।তাই ততখানিও কষ্ট হয়নি, যতটা আশঙ্কা করেছিলাম।
![]()
|
---|
মোটামুটি সাড়ে আটটার মধ্যে সেখানে পৌঁছে খোঁজ খবর নিয়ে এন্ডোস্কোপি শুটে যখন পৌঁছালাম, তখন ও নার্সিং স্টেশন ফাঁকা। সেখানে কর্মরত একজন ডি গ্রুপের কাছ থেকে জানতে পারলাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই সকলে চলে আসবেন। আমাদের আগে সেখানে একজন পেশেন্ট অলরেডি পৌঁছে গিয়েছিলো, ওনারও এন্ডোস্কোপি করার ডেট ছিল ওই দিন।
ওনাদের সাথে কথা বলে বইটা জমা দিয়েছিলাম। তবে পরবর্তীতে জানতে পারলাম এন্ডোস্কোপি করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস এবং এন্ডোস্কোপির বিল করিয়ে তবেই ওখানে বই জমা দিতে হবে। তাই আবার আমি এবং ননদের হাজব্যান্ড গ্রাউন্ড ফ্লোরে এলাম শশুর মশাইকে ওখানে বসিয়ে রেখে, কারণ আমাদের সাথে এলে অনেকটা জায়গা আবার শুধু শুধু ওনাকে হাঁটতে হতো।
আমি পৌঁছে গেলাম ওষুধের দোকানে আর ননদের হাজব্যান্ড গিয়ে লাইন দিল বিল্ডিং কাউন্টারে। দুজনেই কাজ শেষ করে আবার একসাথে এন্ডোস্কোপি করার জায়গায় গিয়ে লাইন দিলাম। ততক্ষণে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে এবং রিসেপশনেও লোক চলে এসেছে। এরপর এক এক করে ওরা সমস্ত কার্যাবলী শুরু করল।
সমস্ত ডিটেইলস ফর্মে ওরা নিজেরাই ফিলাপ করেছিলো। শুধু রোগীর বাড়ির লোকদের কাছ থেকে কিছু বিষয়ে জেনে নিয়েছিল যেমন,- রোগীর কোনো ইনজেকশন বা ওষুধে এলার্জি আছে কিনা? কোনো ফলস দাঁত আছে কিনা? কোনো দাঁত নড়ে কিনা বা ভাঙ্গা কোনো দাঁত রয়েছে কিনা, যেটা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই সমস্ত কিছু ফর্মে লেখার পর ওরা রোগীদেরকে বেডে শুইয়ে দিতে বলল।
![]()
|
---|
ওখানে লাইন দিয়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০ টা বেড ছিলো যেখান রোগীদের শুইয়ে রাখা হচ্ছিলো এবং ডাক্তার এসে যখন এন্ডোস্কোপি শুরু করার পর জমা দেওয়া বইয়ের সিরিয়াল অনুযায়ী রোগীদেরকে এন্ডোস্কোপি রুমের সামনে নিয়ে বসাতে হচ্ছিলো। শ্বশুর মশাইয়ের বইটা দুই নম্বরে ছিলো, তাই খুব বেশিক্ষণের অপেক্ষা করতে হয়নি।
![]()
|
---|
এন্ডোস্কোপি রুমের সামনে শুধুমাত্র রোগীকেই বসে থাকতে দেয়, তাই আমরা ওনাকে বসিয়ে রেখে ওয়েটিং রুমে এসে অপেক্ষা করলাম। ওখানে আমি এবং ননদের হাজব্যান্ড নিজেদের মধ্যেই কথা বলছিলাম। আসলে এন্ডোস্কোপি রুমটা ওপেন হতেই ভেতরে রাখা পাইপটা আমার চোখে পড়ল এবং আমি ননদের হাজব্যান্ডের কাছ থেকে জানতে চাইছিলাম ওই পাইপটাই ওরা মুখের ভেতর দিয়ে, আমাদের খাদ্যনালীতে ঢোকায় কিনা।
![]()
|
---|
দাদা হ্যাঁ বলার পরে আমি রীতিমতো চুপ হয়ে গিয়েছিলাম এটা ভেবে যে, অমন মোটা একটা পাইপ যখন আমাদের খাদ্যনালী দিয়ে ঢুকবে ঠিক কতখানি ব্যাথা লাগবে। এই ব্যাথাটা আদেও আমার শ্বশুরমশাই কতখানি সহ্য করতে পারবেন, এই বিষয়টা নিয়ে আমি যথেষ্ট চিন্তিত ছিলাম। তবে আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে পেছন থেকে হঠাৎ করে শ্বশুরমশাই আমার ননদের হাজব্যান্ডের নাম ধরে ডেকে উঠলো।
![]()
|
---|
ওনাকে দেখেই আমি তো চুপচাপ বসেই রইলাম। উনি হেঁটেই এন্ডোস্কোপি রুম থেকে ওয়েটিং রুম পর্যন্ত চলে এসেছেন। প্রথমে ভাবলাম বোঝায় এন্ডোস্কোপি করতেই পারেনি। কিন্তু গিয়ে শুনলাম উনি অনায়াসে করে ফেলেছেন এবং করার পর অন্য সকলের মতো উনার কিন্তু কোনো সমস্যাও হচ্ছে না। মূলত ওনার খিদে পেয়েছে তখন কিছু খাওয়া যাবে কিনা, এই বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্যই ননদের হাজব্যান্ডকে ডেকে নিয়েছিলেন।
যেহেতু আগের দিন রাত ন'টায় খেয়েছেন, তারপর থেকে কোনো কিছু খাওয়া বারণ ছিলো। তাই খিদে পাওয়াটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। ননদের হাজবেন্ড জেনে নেওয়ার পর ওনাকে আমরা পাউরুটি আর জল দিলাম এবং অনায়াসেই উনি সেগুলো খেয়ে নিলেন।
অথচ ওনার পাশের বেডেই যার এন্ডোস্কোপি করা হয়েছে, তিনি ঢোক পর্যন্ত গিলতে পারছিলেন না। আমি অবাক হয়েই শশুর মশাইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিভাবে উনি এন্ডোস্কোপি রুম থেকে বেরোনোর পরেই খাবার খেয়ে নিচ্ছেন।
শুধু আমি নই আমার ননদের হাজবেন্ডও বেশ অবাক হয়েছিলো। যেহেতু ওনারও দুবার এন্ডোস্কোপি করতে হয়েছে, তাই শ্বশুরমশাইয়ের অবস্থার সাথে উনি নিজের অবস্থা কিছুতেই মেলাতে পারছিলেন না। যাইহোক এরপর আরো কিছু ফরমালিটি বাকি ছিল সেইগুলো সম্পন্ন করে এসে দেখি ততক্ষণে শ্বশুর মশাই এর দুপুরের খাবার দিয়ে দিয়েছে এবং উনার খাওয়াও হয়ে গেছে।
এরপর আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো আমাদের, কারণ রিপোর্ট ওখান থেকে সাথে সাথে দিয়ে দেবে বলেছিলো। তাই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর শশুর মশাই এর নাম ধরে ডাকতেই আমরা রিসেপশনে গেলাম এবং আমাদেরকে রিপোর্ট দেওয়া হলো।
রিপোর্ট নিয়ে যথারীতি ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, রিপোর্ট মোটামুটি ভালোই আছে, খুব বেশি সমস্যা নেই। পরবর্তীতে আমাদের কোলোনোস্কোপি করার ডেট রয়েছে ২২ তারিখ। এবার সেই রিপোর্টটা কেমন আসে সেটাই জানার অপেক্ষা।
![]()
|
---|
দশ মিনিট বাদে আমাদেরকে ওখানে একটা পেপারে সাইন করিয়ে তারপর শ্বশুর মশাইকে ছুটি দিয়ে দিলো। ভিতরে ঠান্ডাতে আমাদের সকলের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো,কারণ এসি চলছিলো।
তবে মনে মনে এটা জানতাম ওই মুহূর্তে বাইরে প্রচন্ড গরম হবে, কারণ তখন ঘড়িতে মোটামুটি একটা বাজে। যেহেতু আগের দিন দাদার সাথে বারাসাতে গিয়েছিলাম,তাই রোদ্দুরের তাপ সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম। কিন্তু এইমসের ভেতরে ঢুকে গেলে গরমের আঁচ পাওয়া যায় না।
![]()
|
---|
ঠিক যেমন ভেবেছি তেমনটাই, বাইরে বেরিয়ে ওষুধের দোকানের সামনে অপেক্ষা করছিলাম গাড়ির জন্য। বাইরে তখন রোদ্দুর খাঁ খাঁ করছিল। রোদ্দুরের দিকে চোখ মেলে তাকানো অসম্ভব ছিলো। এই রোদ্দুরের মধ্যে গাড়িটা সকাল থেকে পার্কিংয়ে দাঁড় করানো ছিলো।
তাই গাড়ির ভেতরের অবস্থা ততক্ষণ কি হয়েছিল আশা করছি কিছুটা হলেও আপনারা আন্দাজ করতে পারছেন। গাড়িতে ওঠার পর সিটগুলো মনে হচ্ছিলো রুটির তাওয়া হয়ে আছে। তাড়াতাড়ি করে দরজা বন্ধ করে ড্রাইভার এসি চালানোর কিছুক্ষণ পরে খানিক স্বস্তি পেলাম।
![]()
|
---|
তখন ভরা দুপুর, রাস্তায় লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে, তাই যাওয়ার সময় থেকেও ফেরার সময় টাইম অনেক কম লাগলো। এই গরমে খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরোনোই সঠিক, কারণ এতে শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। যাইহোক গাড়ি ছুটতে শুরু করেছিলো, আর শ্বশুর মশাই গাড়ির ভিতরে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। শুধু উনি ঘুমিয়েছেন বললে ভুল হবে, মাঝখানে আমারও একটু চোখ লেগে গিয়েছিলো।
যাইহোক মোটামুটি আড়াইটার মধ্যে বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলাম সেদিন। অথচ বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় ভেবেছিলাম ফিরতে ফিরতে রাত হবে, বা হয়তো ফেরাই হবে না। যদি শ্বশুর মশাইয়ের কন্ডিশন খারাপ হয়ে যায়, তাহলে আবার ওনাকে ভর্তি করতে হবে। আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে উনি একেবারেই সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে, অনেক তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে এসেছেন।
এরপর আবার কোলোনোস্কোপির দিনের অপেক্ষায়, জানিনা সেদিনের পরিস্থিতি কি হবে। কারণ শুনেছি এন্ডোস্কোপির থেকে কোলোনোস্কপি আরো সাত থেকে আট গুণ বেশি কষ্টকর।
যাইহোক এই ভাবেই আমি গতকালের দিনটা কাটিয়েছি এবং প্রথমবার এন্ডোস্কোপি কিভাবে করা হয়, সেগুলোর সম্পর্কে সামনা সামনি কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি এমন ধরনের পরীক্ষা যেন সত্যিই কাউকে করতে না হয়, ঈশ্বর যেন সকলকে সুস্থ রাখেন। ভালো থাকবেন সকলে। শুভরাত্রি।
এটা খুবই কষ্টকর অভিজ্ঞতা৷ যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে কি উনার এন্ডোস্কপি এবং কোলনস্কপি টেস্ট আসলে কি অসুখের কারণে দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে কি কিছু জানাতে পারেন?
বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্ন কারণে এই টেস্ট গুলো দিতে পারে। আমার শ্বশুর মশাইকে টেস্টগুলো করতে দেওয়া হয়েছে, কারণ উনার লিভারে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেই ট্রিটমেন্টের জন্য প্রথমে এন্ডোস্কোপি করা হয়েছে, যার রিপোর্টে খুব খারাপ কিছু ধরা পড়েনি।দেখা যাক পরবর্তীতে কোলোনোস্কোপিতে কি হয়। ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্টটি পড়ার পর মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।
কোলনস্কপি টেস্ট সম্পন্ন হতে দীর্ঘ সময় নেয়। আমি একবার এই টেস্ট করিয়েছিলাম। বেশ কষ্টদায়ক।
এন্ডোসকপি আসলে কি এটা আমার কোন জানা নাই এবং ধারণাও নেই তবে আপনার পোস্ট পড়ে এটা বুঝতে পারলাম এটা অনেক কষ্টকর এবং এটা খুবই বাজে একটি অবস্থার মধ্য নিয়ে যেতে পারে। আপনারা যেহেতু এন্ডোসকপি টেস্ট করতে গিয়েছেন এটা একটি ভাল কাজ করেছেন এবং আপনার শ্বশুর মশায়ের জন্য শুভকামনা রইল তিনি খুবই দুর্বল সুস্থ হয়ে উঠুক এই প্রার্থনা করি।